সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: মেঘ–পাহাড়ের সাজেক ভ্যালি

মেঘ–পাহাড়ের সাজেক ভ্যালি


চাঁদের গাড়ির ছাদের সামনের জায়গাটা দখলে ছয় বছরের শিশু রবিউলেরতার পাশে বসা ইশতিয়াকআমার জন্যও কিছুটা জায়গা বরাদ্দ আছে সেখানেফটোগ্রাফার ওমর ভাই ছাদের পেছনে বসে খোশগল্প জমিয়ে তুলেছেন ব্যাংকার শান্তনু দেবনাথের সঙ্গেতাঁদের স্ত্রীরাও আছেন সে আড্ডায়সিস্টেম রেস্টুরেন্টের তরুণ বাবুর্চি হাচিং মারমা দারুণ উচ্ছ্বসিত সাজেকের পথে যাত্রা করতে পেরেখাগড়াছড়ির ছেলে হলেও কখনো সাজেক যাওয়া হয়নি তাঁর সাজেক নিয়ে আমার মধ্যে একদিকে যেমন দারুণ কৌতূহল, অন্যদিকে শিশু রবিউলকে নিয়ে চরম বিস্ময়! পাহাড়ি পথে ভ্রমণ করতেই ভয় পান অনেকেঅথচ এই পুঁচকে শিশু কিনা পুরো তিন ঘণ্টার পাহাড়ি পথে চাঁদের গাড়ির ছাদে! 

খাগড়াছড়ি শহর ছাড়তেই সকাল ১০টা বেজে গেলসিস্টেম রেস্টুরেন্ট থেকে রান্নার উপকরণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম থিউনচি মারমার চাঁদের গাড়িতে চেপেডিসেম্বরের শেষে কুয়াশার দাপট ছিল চোখে পড়ার মতোক্রমেই শীতের কুয়াশা কেটে বেরিয়ে এল সূর্যঝলমলে রোদেলা আবহাওয়ায় কখন জানি দীঘিনালা, বাঘাইহাট, মাসালাং বাজার, কাসালাং নদীকে পেছনে ফেলে পৌঁছে গেলাম সাজেকের রুই রুই পাড়ায় এখানে এসে বিস্ময়ের মাত্রা বেড়ে গেল আরওপ্রায় দুই হাজার ফুট পাহাড়ের ওপর ঝকমকে প্রশস্ত পথশহরের আদলে তৈরি ফুটপাত একেবারে পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটিপথের পাশে পাহাড়িদের বাড়িঘর নান্দনিকভাবে সাজানোমনে হলো, বিদেশি কোনো উপত্যকায় পাহাড়ের বুকে সাজানো-গোছানো আদিবাসী-অধ্যুষিত ছোট্ট কোনো শহরে এসে উপস্থিত হলাম 
পর্যটন উন্নয়নের বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে দুর্গম সাজেকের উঁচু পাহাড়ের বুক চিরেসাজেকে গড়ে উঠেছে রুনময় ও সাজেক নামে দুটো আকর্ষণীয় রিসোর্টপাহাড়ের কোল-ঘেঁষে বেশ কিছু কটেজ প্রস্তুত যেখানে রাত যাপন করতে পারবেন অল্প খরচে থাকার ব্যবস্থা হলো আলো রিসোর্টেব্যবস্থাপক লিটন চাকমা সব ব্যবস্থা করলেনকাঠের তৈরি ছোট অথচ পরিপাটি একটা রিসোর্টবাবুর্চিকে রান্নার দায়িত্ব দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম আমরা কংলাক পাড়ার উদ্দেশেরুই রুই থেকে উত্তরে অন্য একটি উঁচু পাহাড়ের ওপর কংলাক পাড়ার অবস্থানসেখানে গাড়ি ওঠার পথ নেইতাই পাহাড় বেয়ে উঠতে হলো আমাদেরলুসাই আর টিপরাদের বসবাস এ পাড়ায়পুই লুসাইয়ের বাড়িতে পাকা পেঁপে খাওয়ার পর পথের ক্লান্তি যেন নিমেষেই হারিয়ে গেলঅসাধারণ স্বাদ এখানকার পাকা পেঁপেরসুস্বাদু কলাও পাওয়া যায় এখানে রুই রুই পাড়ার শেষ প্রান্তে হেলিপ্যাডতার পাশেই পাহাড়ের কোলজুড়ে নির্মাণ করা হচ্ছে অবকাশ কেন্দ্রএখানে বসলে মিজোরামের পাহাড়গুলো চোখের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে অন্যরকম এক রূপ নিয়েসাজেক পাহাড় আর ভারতের পাহাড়ের মাঝখানে বিশাল এক উপত্যকাঞ্চলএটাকে মেঘপুরীর উপত্যকাও বলা যেতে পারেবর্ষাকালে এখানে থাকে মেঘমালার অবাধ বিচরণপাহাড়ের প্রশস্ত বুক, আদিবাসীদের ঘর-বসতি ও নির্জন প্রকৃতির সঙ্গে দারুণ এক সখ্য আছে ভাসমান মেঘপুঞ্জের 

রাতে বারবিকিউ পার্টির আয়োজনটা জমে উঠলরিসোর্টের কর্মচারীরাও আমাদের এই কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণ করলেন স্বেচ্ছায়সব মিলিয়ে জমজমাট এক পিকনিক রাতের পরিধিকে ছোট করে দিলখুব সকালে উঠে কংলাক পাড়ায় চলে গেলাম আবারএখান থেকে উপত্যকা অঞ্চলে তুলার মতো ভাসমান মেঘ দেখার মজাই আলাদাপ্রথম আলো জবসের লিঙ্কন ও ব্র্যাক ব্যাংকে কর্মরত সোহেলের পাহাড়ি অঞ্চলে বেড়াতে আসা এই প্রথমএ ছাড়া কাউসার ভাইও ঘোরাঘুরির জগতে নতুনতবে তাঁর ছেলে তো আমাদের তাক লাগিয়ে দিল পাক্কা একজন পর্যটকের মতো আচরণ করেযাই হোক, কয়েকজন টিপরা নারীকে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে পানি নিয়ে আসতে দেখে আমাদেরও কৌতূহল জাগল ঝরনাটা দেখে আসারশুষ্ক মৌসুমে অনেক কষ্ট করে এখানকার অধিবাসীদের পানি সংগ্রহ করতে হয় এদিকে ইফতেখার ভাই ও ইশতিয়াক দুজনে ঘুমিয়েই সকালটা পার করে দিলেনপরে অবশ্য আফসোস না করে পারলেন নারুই রুই পাড়ার পাদদেশে দারুণ এক সংযোজন অ্যাডভেঞ্চার ট্রেইলদুপুরে ফেরার আগে ওমর ভাই আর আমি ঢুকে পড়লাম সে ট্রেইলেভিন্নধর্মী অনেক কিছু আছে সেখানেসেদিনই সাজেকের অনেক পর্যটন স্পট উদ্বোধন করা হবেচারদিকে সাজ সাজ রবসেনাসদস্যরা ভীষণ ব্যস্ত অপেক্ষা করার মতো সময় অবশ্য আমাদের হাতে ছিল নাফিরে আসতে হলো খাগড়াছড়ি তিন ঘণ্টার আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে

যেভাবে যাবেনঃ
ঢাকার কলাবাগান, ফকিরাপুল ও কমলাপুর থেকে খাগড়াছড়িগামী যেকোনো বাস ধরে নামতে হবে খাগড়াছড়ি শহরেএরপর জিপ বা চাঁদের গাড়ি রিজার্ভ করতে হবেজিপ ভাড়া আট থেকে নয় হাজার টাকাসাজেকে থাকার জন্য সেনাবাহিনী পরিচালিত বিভিন্ন রিসোর্ট আছেযাওয়ার আগে যোগাযোগ করে যাওয়া ভালোযেকোনো মৌসুমে সাজেক ভ্রমণ অনন্যতবে বর্ষাকালে এর সৌন্দর্য অসাধারণ

সূত্রঃ প্রথম আলো, ০১:০১, মার্চ ৩১, ২০১৫

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।