কী যে
ভালো আমার লাগেলা আজ এই সকাল বেলায় কেমন করে বলি! ওডিশার চিল্কা হ্রদ দেখে লিখেছিলেন
বুদ্ধদেব বসু। আর হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার পুটিজুরি বাজারে দি প্যালেস
রিসোর্টের ঝুলন্ত সেতুতে দাঁড়িয়ে বলতে হয়, আহা! এ কোথায় এলাম! এ তো রূপসী
বাংলাদেশের সুন্দরতম স্থান। জীবনানন্দর
ভাষায়, এই পৃথিবীতে একটা স্থান আছে—সবচেয়ে
সুন্দর করুণ।
যেদিকে
চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। পাহাড় আর পাহাড়, গিরিখাদ, সরোবর, ৩০ হাজার
গাছে ঢাকা ১৫০ একর,
প্রকৃতি
যেন নিজের হাতে সাজিয়েছে পরিসরটুকু।
চা-বাগান
পেরিয়ে রিসোর্টের অভ্যর্থনা
ভবনে এলে কেতাদুরস্ত অভ্যর্থনাকারীরা স্বাগত জানালেন। আমাদের লাগেজের দায়িত্ব নিজেদের হাতে নিয়ে আমাদের তুলে দিলেন গলফ
কার্টে। জনা পনেরোর দলটা ছোট ছোট উপদলে বিভক্ত হয়ে সেই গাড়িতে চড়ে চললাম
ওপরের দিকে, আকাশে
হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় যেখানে। একেকটা
পাহাড়ের চূড়ায়,
শানুদেশে
একেকটা ভিলা, পাঁচ
তারকাসুবিধা সমেত। পাখিডাকা, ছায়াঢাকা
২৩টা ভিলা
আছে। এ রকম কয়েকটা বাংলোয় আমরা উঠলাম
ভাগাভাগি করে। ঘরের
জানালা থেকে
কিংবা বারান্দায় বসে দেখা যায় পাহাড়, ফুল,
দুটো
বড় লেক। ওই যে সুদৃশ্য বহুতল ভবন, প্রধান টাওয়ার। থাকার
জন্য আছে ১০৭টা রুম। পুরোটা
তো ঘরের
জানালা দিয়ে দেখে শেষ করা যাবে না। গাড়ি
নিয়ে চললাম পুরো রিসোর্ট
ঘুরে
দেখতে। ব্রিটিশ জেনারেল ম্যানেজারের
তত্ত্বাবধানে এখানকার ব্যবস্থা
নিখুঁত
আর আন্তরিক। চারটা বড় সভাকক্ষ, ৪০০ জনের
ব্যাংকুয়েট হল,
ছোটদের খেলার জায়গা তিনটা, বিলিয়ার্ড, ফুটবল, বাস্কেটবল, টেনিস, রিমোট
কন্ট্রোল কার
রেসিংয়ের ব্যবস্থা। দুটো
সুইমিংপুল, একদিক
থেকে জলধারা এসে পাহাড়ের
গা
বেয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে,
এটাকে
নাকি বলে ইনফিনিটি পুল। দুটো সিনেপ্লেক্স, থ্রিডি
সিনেমা দেখারও ব্যবস্থা আছে। আমাদের
বাচ্চারা বসে একটা ছবি
দেখেও ফেলল।
দি
প্যালেসে রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফুর রহমান জানালেন, কেরালা
থেকে আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞ আসছেন, আয়ুর্বেদ চিকিৎসা আর স্পা চালু হচ্ছে। এর
ভবনটাই তো স্থাপত্য সৌন্দর্যের অপরূপ নিদর্শন। চমৎকার নির্মাণশৈলীর মসজিদ আছে নিরালায়। আছে দুটো নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র। আরিফ বললেন, ‘হেলিকপ্টার নামার হেলিপ্যাড আছে তিনটা, নিজস্ব হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে যাওয়াও যেতে পারে
সেখানে। লেকে মাছ ধরা যায়, বোটিং
করা যায়। আর তার পাশে বিস্ময় নিয়ে আছে ক্রিকেটারদের নেট প্র্যাকটিসের জায়গা
আর বাচ্চাদের
ইনডোরস জোন।’ কোনোদিন তো থাকতে পারব না, তবুও
কৌতূহলবশত দেখতে গেলাম
দু-দুটো প্রেসিডেনশিয়াল ভিলা! এ দুটোর নাম জর্জ হ্যারিসন আর রবিশঙ্কর। জাঁকজমক দেখে সুনীলের মতো বলতে হয়, দেখিস, একদিন
আমরাও। আবার গর্বও হয়, বাংলাদেশ এগোচ্ছে, আমাদের সক্ষমতা বাড়ছে, বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা এই রকম একটা
বড় স্বপ্ন দেখেছেন এবং তা বাস্তবায়িত করেছেন।
জানা
গেল রূপালী ব্যাংক এই উদ্যোগের ব্যাংকিং অংশীদার।
এক বেড, দুই বেড, তিন বেডের ভিলাগুলোয় অবশ্য আমরা নিজেরাই রাত কাটালাম। টেলিভিশন, ওয়াই-ফাই, ফোন তো থাকবেই পাঁচ তারা রিসোর্টে। নিজস্ব বেকারি, আইসক্রিম পারলার। ডাইনিং ভবন আছে অনেকগুলো, লেকসাইড ক্যাফে নস্টালজিয়া, ভিলা ক্যাফের নাম রেগুলেশন, ফাইন ডাইন রেস্তোরাঁর নাম সায়গন, অল ডে ডাইন হচ্ছে অলিভ। অ্যারাবিয়ান খাবার এলাকা সিসা লাউঞ্জ। ইতালিয়ান, মেক্সিকান, ইন্ডিয়ান, কন্টিনেন্টাল, ভিয়েতনামি খাবার এবং আন্তর্জাতিক বুফে। ঢাকা থেকে বাসে, ট্রেনে, গাড়িতে, উড়োজাহাজে এবং হেলিকপ্টারে যাওয়া যাবে। ঢাকা থেকে এলে তো দূরত্ব বেশি নয়, কিন্তু যানজটের পথে গাড়িতে চার ঘণ্টা লাগবে ধরে নিয়ে বের হওয়াই ভালো। দিনের সৌন্দর্য এক রকম। রাতের রূপ তো মোহনীয়, স্বর্গীয়। টাওয়ারটা যেন অমরাবতীর মতো জ্বলছে। সিনেপ্লেক্স এলাকায় বারকোড ক্যাফেতে বসে কফি খেতে খেতে আমাদের দলের দুজনের জন্মদিনের কেক কাটাও সেরে নিলাম আমরা। ওই ঘর থেকে দূরে দেখা যায় বাচ্চাদের ইনডোর গেমস জোন। ওখানটায় আছে টেবিল টেনিস, বিলিয়ার্ড, ফুটবল আর পিএস-থ্রির বিশাল সম্ভার। দি প্যালেস রিসোর্ট আর স্পার আরও একটা প্রশংসা করতে হবে, প্রকল্পটা পরিবেশবান্ধব, প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে করা। তাজা সবজির চাষ হচ্ছে বাগানে, কত ধরনের ফলগাছ যে আছে! ঝাঁকা ঝাঁকা সবুজ লেবু বা কাঁঠাল ফলছে। কোনো গাছ কাটা হয়নি, বরং অনেক গাছ নতুন করে রোপণ করা হচ্ছে। চিত্রশালা আর পাঠাগারও থাকছে এই রিসোর্টে। নাগরিক জীবনের এক ঘেয়েমি থেকে বাঁচতে অনেকেই বিদেশে যান। দেশের মধ্যে একটা সবুজ স্বর্গ প্রকৃতি আর স্বপ্নবান মানুষেরা মিলে রচনা করেছেন, সেখানে একটিবার যাওয়া যেতে পারে।
যোগাযোগ: ফোন: +৮৮ ০১৯১০০০১০০০
ওয়েবসাইট: www.thepalacelife.com
ই-মেইল: info@thepalacelife.com
ফেসবুক: https://www.facebook.com/pages/The-Palace-Resort-Spa-Bangladesh/133359703407897
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।