দলিত সম্প্রদায়ের এক নারীকে বিয়ে করাটাই তার অপরাধ! আর
তাতে বেঁচে থাকাটাই রীতিমতো কঠিন হয়ে উঠেছে সন্তোষ মুরত সিংয়ের। শুধু তাই নয়, সন্তোষের সব
সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া হয়েছে এমনকি তাঁকে মৃত বলেও ঘোষণা দিয়েছে তাঁর পরিবারের
লোকেরা। আর স্বজনদের এই কৃতকর্মের প্রতিবাদেই গত চার বছর ধরে যন্তরমন্তরে অনশন
আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সন্তোষ। দেওয়ালে সাঁটা পোস্টারে হিন্দিতে লেখা ‘ম্যায় জিন্দা হুঁ’ (আমি বেঁচে আছি)।
ইংরেজিতে লেখা আই অ্যাম এলাইভ, হেল্প মি টু এলাইভ (আমি জীবিত আছি, আমাকে বেঁচে থাকতে
দয়া করে সহায়তা করুন।) পোস্টারের তলায় বসেই কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সন্তোষ
বোঝাতে চাইছেন তিনি বেঁচে আছেন।
উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর বাসিন্দা সন্তোষ (৩৫) গত ২০০০
সালে নিজের রাজ্য ছেড়ে চলে যান ভারতের সিনেমা পাড়া মুম্বাইয়ে। সেখানে গিয়ে বলিউডের
অভিনেতা নানা পাটেকরের রাঁধুনি ও গাড়ির চালকের দায়িত্ব নেন তিনি। সবকিছুই ঠিকঠাক
চলছিল। যদিও সন্তোষের স্বজনরা মুম্বাই ছেড়ে নিজের বাসায় ফিরে এসে কাজের জন্য চাপ
দিচ্ছিলেন। ২০০২ সালে নানা পাটেকরের বাসায় রাঁধুনির কাজ করার সময়েই মহারাষ্ট্রের
এক দলিত মেয়ের সাথে মন দেওয়া নেওয়া হয় সন্তোষের। এরপর বিয়েও করেন ওই মেয়েকে।
কিন্তু তারপরই তৈরি হয় সমস্যা। বিয়ে করেই বারাণসীতে নিজের বাসায় ফিরতেই সন্তোষকে একঘরে
করে রাখা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়াও তাঁকে দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় স্বজনরাও। শেষ
পর্যন্ত সবরকম আশা ছেড়ে ফের মুম্বাইতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সন্তোষ। মুম্বাই
ফিরে এক মাস পরই খবর পান তাঁর ভাইপো সন্তোষকে মৃত বলে ঘোষণা দিয়েছেন। পুরো ঘটনায়
মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সন্তোষ। সন্তোষ জানান, ‘আমার স্বজনরা আমার শেষকৃত্যও
সেরে ফেলেন এবং ডেথ সার্টিফিকেটও বানিয়ে ফেলে তারা। এই তথ্যের ভিত্তিতে তারা আমার
নামে যে ১২.৫ একর জমি ছিল সেটাও হাতিয়ে নেয়। সেই থেকে আমি লড়াই করে আসছি যে আমি
এখনও বেঁচে আছি। বিষয়টি নিয়ে হজরতগঞ্জ পুলিশ থানায় একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশের কাছেও আর্জি জানানো হয়েছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোন সহায়তা পাওয়া যায়নি।
আমি যখন আইনজীবীর কাছে গেলাম তারাও মোটা অর্থ চাইছেন, যেটা আমার কাছে নেই। এরপর আমি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু তাদের
তরফে কোন আশ্বাস মেলেনি’। যতদিন না সরকারি
খাতায় ফের জীবিত বলে তাঁকে প্রমাণিত করা হচ্ছে ততদিন এই লড়াই চালু থাকবে বলেও
জানান সন্তোষ। তাঁর আশা সরকার এবং গ্রামের লোকেরাও একদিন ভুল বুঝতে পারবেন এবং
তাঁর সম্পত্তি ফিরিয়ে দেবেন।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।