এখন রসাল ফলের মৌসুম। আম,
জাম, কাঁঠাল,
লিচু, তরমুজ, আনারস ইত্যাদি ফলের সমারোহ বাজারে।
কিন্তু ডায়াবেটিসের রোগীরা এসব প্রাণভরে খেতে পারেন না, রক্তে
শর্করা বেড়ে যাওয়ার ভয়ে। আসলেই কি তাঁদের জন্য সব ধরনের ফল নিষিদ্ধ?
কোন খাবারে রক্তে শর্করা কতটা বাড়ে,
তা নির্ভর করে তার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এবং গ্লাইসেমিক লোডের
ওপর। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৭০-এর বেশি হলে তা উচ্চ মাত্রা, ৫৫-এর
নিচে হলে কম মাত্রার। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যত উচ্চ, তা
রক্তে শর্করা তত বেশি বাড়ায়। আবার গ্লাইসেমিক লোড ২০-এর বেশি হলে তা উচ্চ,
১১-এর নিচে কম। তাহলে দেখা যাক, আমাদের
মৌসুমি ফলগুলোতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ও গ্লাইসেমিক লোড কোনটাতে কী মাত্রায় আছে।
আমের গ্লাইসেমিক লোড ১২০ গ্রামে ৮-এর মতো। আর জাতভেদে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ভিন্ন,তবে
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ৫৫ থেকে ৬০-এর মধ্যে। অর্থাৎ আম মাঝারি মাত্রার মধ্যে পড়ে।
আমে প্রচুর আঁশ থাকার কারণে মিষ্টি হওয়া সত্ত্বেও এটি দ্রুত শর্করা বাড়ায় না।
তারপরও হিসাব করে খেতে হবে। তবে খেজুরের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স উচ্চ মাত্রার আর লোডও
বেশি, ১৮। খেজুর তাই দিনের শেষে একটার বেশি খাওয়া ঠিক
হবে না। তবে খেজুর লৌহ ও অন্যান্য খনিজের চমৎকার উৎস। রমজানে একটি বা দুটি খেজুরই
অনেক শক্তি জোগায়। তরমুজেরও গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক বেশি,
৭০-এর ওপর। কিন্তু এতে আছে প্রচুর জলীয় অংশ,
যা গ্রীষ্মে মানবদেহের পানিশূন্যতা পূরণ করে। আনারসও মাঝারি
মাত্রার—এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫৬। কাঁঠাল বেশ ভালোই
শর্করা বাড়াতে পারে; এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৬৮-এর ওপর। তবে
কাঁঠালেও আছে অনেক আঁশ। বেশির ভাগ ফলমূলে শর্করা ছাড়াও অতি প্রয়োজনীয় উপাদান,
যেমন ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট,
খনিজ ও আঁশ রয়েছে। তাই খাবারের তালিকা থেকে ফল বাদ দেওয়া ঠিক
নয়। তবে অন্যান্য যেকোনো শর্করা খাবারের মতো ডায়াবেটিসের রোগীদের ফলমূলও খেতে হবে
নির্দিষ্ট মাত্রায়, নির্দিষ্ট সময়ে। ফলের মৌসুমে ফল খেতে
চাইলে প্রয়োজনে অন্যান্য শর্করা (যেমন ভাত) কমিয়ে দিন। ভাত বা মূল খাবার গ্রহণের
পরপরই ফল না খেয়ে অন্য সময়ে খান, অর্থাৎ
শর্করা গ্রহণের সময়টা সারা দিনে ভাগ করে নিন। একই সঙ্গে একাধিক ফল অনেক পরিমাণে
খাবেন না।
ডা. তানজিনা হোসেন
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।