ফিজিওথেরাপী হচ্ছে
মানবদেহ গঠন ভিত্তি করে বিজ্ঞান সম্মত এক ধরনের চিকিৎসা সেবা পদ্ধতি যা মানুষকে
সচল, সক্ষম থাকতে
সহায়তা দেয়। বাত-ব্যথা, প্যারালাইসিস ও যে কোনও ধরনের ইনজুরিতে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে
উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে ফিজিওথেরাপি। উন্নত বিশ্বের আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি
ফিজিওথেরাপি। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় ব্যবহূত হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির। এসব
প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে- শর্ট ওয়েভ ডায়াথার্মি,
আলট্রাসাউন্ড,
ইনফ্রারেড রেডিয়েশন,
ইলেকট্রিক্যাল মাসেল স্টিমুলেটর, ট্রান্সকিউটেনিয়াস নার্ভ
স্টিমুলেটর, আলট্রাভায়োলেট
রেডিয়েশন, ইন্টার
ফেরানশিয়াল কারেন্ট, কম্পিউটারাইজড
অটো ট্রাকশন মেশিন ও মাইক্রোওয়েভ ডায়াথার্মি,
ওয়াক্স বাথ,
ভাইব্রেটর ইত্যাদি। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায়
প্রযুক্তি ব্যবহারের এ অংশটিকে বলা হয় ইলেক্ট্রো থেরাপি।
ফিজিওথেরাপীর গরুত্ব বাড়ছে কেন:
প্রথমত: বাংলাদেশে বয়োবৃদ্ধ লোকের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। বর্তমানে
বাংলাদেশের ১০% এর অধিক সংখ্যক লোকের বয়স ৬০ বছরের উর্দ্ধে। অতীতে কেবল
অবস্থাসম্পন্ন পরিবারে বয়োবৃদ্ধ লোকের সাক্ষাত পাওয়া যেত। বর্তমানে গ্রামের প্রায়
পরিবারে একজন হলেও একজন বৃদ্ধ পুরুষ বা মহিলার সাক্ষাত পাওয়া যায় বড় কোন রোগ না
থাকা সত্বেও অনেকে অচল হয়ে বাড়ীতে বসে থাকেন।
দ্বিতীয়ত: পরিবেশগত ও পুষ্টিহীনতার কারণেও প্রতিবন্ধী শিশু ও বয়স্ক লোকের সংখ্যা বাড়ছে।
তৃতীয়ত: যানবাহন বৃদ্ধি হওয়াতে দুর্ঘটনা বাড়ছে। দুর্ঘটনায় সবাই মারা যায় না। যারা বেচেঁ থাকেন তারা পঙ্গুত্ব বরণ করে দুর্বিসহ জীবন জাপন করে। অন্যদিকে দুর্ঘটনায় যারা বেচেঁ যাচ্ছেন হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু থাকলেও তা অপরিপূর্ণ, কারণ একজন ডাক্তার ব্যান্ডেজ বা পস্নাস্টার করে দীর্ঘদিন বিশ্রামে থাকার কারণে মাংসপেশী শুকিয়ে যায় বা জয়েন্ট শক্ত হয়ে যায় যা ফিজিওথেরাপী চিকিৎসা দ্বারা সচল রাখা যায়। কিন্তু অনেকেই তা জানেন না এবং রেফারেল পদ্ধতির প্রচলন না থাকায় এক চিকিৎসক ফিজিওথেরাপিষ্টের নিকট রোগী রেফার্ড করেন না। ফিজিওথেরাপীর গুরুত্ব দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এখনও প্রত্যেক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দুই জন করে ফিজিওথেরাপিষ্টের পদ সৃষ্টি হয়নি এবং নূ্যনতম সুবিধা ও সাধারণ যন্ত্রপাতি দিয়ে ফিজিওথেরাপী জন্ম লাভও করেনি।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ফিজিওথেরাপী: গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র একটি জনহিতকর দাতব্য প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র তার ব্যতিক্রমী চিন্তা ভাবনা থেকে এমবিবিএস পাশ করার পর ইন্টার্নশীপ কালিন ন্যূনতম এক সপ্তাহ ফিজিওথেরাপী বিভাগে রোগীর শারীরিক পরীক্ষার পাশাপাশি ফিজিওথেরাপী সেবা পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করেন। মেডিকেল ছাত্ররা তাদের এমবিবিএস শিক্ষা গ্রহণ কালেও ফিজিওথেরাপী ও আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসা সম্পর্কে কয়েক সপ্তাহ তাত্তি্বক ও প্রাকটিকেল ক্লাশ করে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪টি সেন্টারের সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল, শ্রীপুর গণস্বাস্থ্য (গাজীপুর), গাইবান্দা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ আরও ১৬ টি শাখায় কমিউনিটি ফিজিওথেরাপী বিভাগ চালু করেছে। এমন কি বাসায় গিয়েও ফিজিওথেরাপী সেবা প্রদান করা হয়। প্রতিটি সেন্টারে আছে আধুনিক উন্নত মানের যন্ত্রপাতি যেখানে বিদু্যৎ নাই সেখানে আছে ব্যাটারী চালিত বা চার্জ সিস্টেম ইলেকট্রোথেরাপী যন্ত্রপাতি। শুধু যন্ত্রপাতির উপর নির্ভরশীল নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে (মেনু্যয়্যালী থেরাপী) হাতের মাধ্যমে করানো হয়। চিকিৎসা ব্যয় অন্যান্য হাসপাতালের চেয়ে খুবই কম। কম খরচে চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যবীমার ব্যবস্থা আছে।
গণবিশ্ববিদ্যালয় হতে ৪ বছর কোর্স সম্পূর্ণ করে এক বছর ইন্টার্নশীপ কালে কমিউনিটি ফিজিওথেরাপী বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য ন্যূনতম ৪ মাস বিভিন্ন চরসহ অন্যান্য শাখা থেকে অতিরিক্ত অভিজ্ঞতা লাভ করে। গ্রামের পরিবেশ ও মানুষের সাথে মিশে তারা ফিজিওথেরাপী করেন নবীন ফিজিওথেরাপিষ্টগণ।
যেসব রোগে ফিজিওথেরাপীতে উপকার হয়:-
১. আথ্র্যাইটিস
২. ফ্রোজেন সোলডার
৩. সায়াটিকা বা বাত ব্যথা
৪. স্পনডাইলেসিস (শির দাডায় ব্যথা)
৫. পিঠে ও কোমড়ের ব্যথা
৬. মাংসপেশীর ব্যথা
৭. প্যারালাইসিস
৮. মস্তিষ্কের আঘাতজনিত বিকলাঙ্গ
৯. ক্রীড়া জনিত আঘাত
১০. হাড় ভাঙ্গার পরবর্তী মাংস পেশী শুকিয়ে বা শক্ত হয়ে যাওয়া।
১১. পুড়ে যাওয়ার পরবর্তী মাংসপেশী শক্ত হয়ে গেলে।
১২. মুখ বেঁকে যাওয়া
১৩. অবস্থার ধরন পরিবর্তন
১৪. টেনিস এলবো ইত্যাদিঃ
নাসিমা ইয়াসমিন
সিনিয়র ফিজিওথেরাপিস্ট
হেড-ক্লিনিক্যাল এন্ড কমিউনিটি ফিজিওথেরাপিস্ট
গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল,ধানমন্ডি, ঢাকা।
সিনিয়র ফিজিওথেরাপিস্ট
হেড-ক্লিনিক্যাল এন্ড কমিউনিটি ফিজিওথেরাপিস্ট
গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল,ধানমন্ডি, ঢাকা।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় প্রযুক্তি
যে কোন হাড়ের ব্যথায় শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি দারুণ কার্যকরী। এটি হাড়ের
ভেতরকার অস্থিমজ্জা ও জয়েন্টের সন্ধিতে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো বাড়িয়ে দেয় এবং
হাড় ক্ষয় রোধ করে ও হাড়ের ব্যথা কমায়।
* যে কোন মাসেলের স্পাজমের
ক্ষেত্রে ব্যবহূত হয় আলট্রাসাউন্ড। এটি মাসেল স্পাজম ভালো করে এবং যে কোন কাটা বা
আঘাতের ক্ষত দ্রুত সারিয়ে তুলে।
* প্যারালাইটিক মাসেল অথবা মাসেল
উইকনেসের ব্যবহার করা হয় ইলেকট্রিক্যাল মাসেল স্টিমুলেটর। এটি মাসেলকে স্টিমুলেট
করে দ্রুত কার্যকরী করে।
* যে কোন নার্ভপেইন ও নার্ভ
উইকনেসে ব্যবহার করা হয় ট্রান্সকিউটেনিয়াস নার্ভ স্টিমুলেটর।
* দুটি হাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা
জায়গা কমে যাওয়ার কারণে শরীরের নির্দিষ্ট নার্ভ রুটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়।
এই তীব্র ব্যথা থেকে প্রতিকার পেতে বা দুটি হাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা ঠিক
করতে ফিজিওথেরাপিতে ব্যবহার করা হয় কম্পিউটারাইজড অটো-ট্রাকশন মেশিন।
* সুপারফিশিয়াল ব্লাড
সার্কুলেশন বাড়াতে ব্যবহূত হয় ইনফ্রারেড রেডিয়েশন ও মাইক্রোওয়েভ ডায়াথার্মি।
* ইন্টারনাল অর্গান ও জয়েন্টের
ইন্টারনাল স্ট্রাকচারকে স্টিমুলেট করে ব্যথা মুক্ত করতে ব্যবহূত হয়
ইন্টারফেরেনসিয়াল কারেন্ট।
* স্কিন ডিজিজের ক্ষেত্রে
কার্যকরী ভূমিকা রাখে আলট্রাভায়োলেট রেডিয়েশন।
* মাসেল স্পাসটিসিটি ও
হাত-পায়ের ছোট ছোট জয়েন্টের পেইনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ওয়াক্স বাথ।
এসব উন্নত প্রযুক্তি তথা
ইলেকট্রোথেরাপি ব্যবহারের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপিতে ব্যবহূত হয় ম্যানুয়াল থেরাপি।
ম্যানুয়াল থেরাপিতে বিভিন্ন জয়েন্টের এক্সারসাইজ, মেনুপোলিশন,
ইয়োগা থেরাপি, ম্যাসেজ ও অ্যারোমা
থেরাপি ইত্যাদিসহ ম্যাকেঞ্জি, পি. এন. এফ, সিরেক্স টেকনিক বাত, ব্যথা, প্যারালাইসিস, স্পোর্টস ইনজুরিসহ কোন ইনজুরিতে
কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
তবে ফিজিওথেরাপি গ্রহণের আগে
অবশ্যই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক তথা ফিজিওথেরাপিস্ট-এর ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী চিকিৎসা
নিতে হবে। নইলে যে কোন অঘটনও ঘটতে পারে। সব কথার শেষ কথা বর্তমানে ব্যথা, বাত,
প্যারালাইসিসের জন্য আধুনিক বিজ্ঞানে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত
অন্যতম চিকিৎসা ফিজিওথেরাপি। যার অধিকাংশই প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
সূত্রঃ ইত্তেপাক, আমারস্বাস্থ্য
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।