পশ্চিম আফ্রিকার চারটি দেশে
ব্যাপকভাবে ইবোলা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য বিষয়ে
জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সুইজারল্যান্ডে
ইবোলা নিয়ে দুই দিনের জরুরি বৈঠকের পর গতকাল শুক্রবার সংস্থাটি এ ঘোষণা দেয়। এদিকে
ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ভারতে সতর্কতা জারি করেছে সে দেশের সরকার। খবর
বিবিসি, রয়টার্স ও এনডিটিভির।
গতকাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক বিবৃতিতে বলা হয়, পশ্চিম আফ্রিকার চারটি দেশ গিনি, লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়া ও সিয়েরা লিওনে ইবোলা রোগে প্রায় এক হাজার মানুষের
মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ৭০০ জনেরও বেশি। এই রোগের সংক্রমণ
প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। লাইবেরিয়া
সরকার ইতিমধ্যে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
মহাপরিচালক মার্গারেট চ্যান টেলিফোনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইবোলা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা একে ঠেকাতে পারছি না।’ তিনি বলেন, সংক্রমণ প্রতিরোধ কোনো একটি
দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে সম্ভব নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ইবোলায় আক্রান্ত রোগীদের তীব্র জ্বর হয়। জ্বরে আক্রান্তদের
মৃত্যুহার ৯০ শতাংশ। বন্য প্রাণী থেকে এই ভাইরাস
প্রথমে মানুষে এবং পরে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। বিশেষ এক ধরনের
বাদুড়ের শরীরে এই ভাইরাস সুপ্ত অবস্থায় থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির
রক্ত বা শরীরের অন্য তরল পদার্থের সংস্পর্শে এলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। ইবোলা প্রতিরোধে এবং এর সংক্রমণ ঠেকাতে কোনো কার্যকর
ব্যবস্থা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
স্বাস্থ্য নিরাপত্তাবিষয়ক প্রধান কেইজি ফুকুদা বলেন, তবে যথাসময়ে
উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হলে এর প্রতিরোধ সম্ভব।
সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়া ও গিনিকে ইতিমধ্যে ২৬ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা দেওয়ার
ঘোষণা দিয়েছে আফ্রিকান উন্নয়ন ব্যাংক ও বিশ্বব্যাংক। ইবোলার সংক্রমণ
দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় লাইবেরিয়ার দূতাবাসের কর্মকর্তাদের পরিবারকে অবিলম্বে দেশে ফিরে
আসার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সতর্কতা হিসেবে ব্যাংককসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের
বিমানবন্দরগুলোতে অসুস্থ ভ্রমণকারীদের শরীরের তাপ মাপার জন্য থার্মার ক্যামেরা
স্থাপন ও চিকিৎসক নিয়োগ করা হচ্ছে। এদিকে ইবোলা হুমকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ কতটা তৈরি, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দীন
মুহাম্মদ নূরুল হক গতকাল বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আফ্রিকাতে বিশেষ
করে (জাতিসংঘের) শান্তি মিশনে আমাদের যাঁরা আছেন, তাঁদের নিয়ে আমরা
উদ্বিগ্ন। তবে হুমকি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছি।’ লাইবেরিয়া ও গিনিতে শান্তি মিশন থেকে যাঁরা দেশে আসবেন, তাঁদের কারও মধ্যে অস্বাভাবিক জ্বরসহ অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিলে
তাৎক্ষণিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর
রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে আপাতত ঝুঁকি নেই। রোগ
শনাক্ত করার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো দেশে আছে। নজরদারির ব্যবস্থাও
আন্তর্জাতিক মানের। তবে পশ্চিম আফ্রিকার
দেশগুলোতে কেউ গেলে তাদের সতর্ক করার প্রয়োজন আছে। গত বুধবার পার্লামেন্টে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষবর্ধন
বলেন, আফ্রিকার ওই চার দেশে প্রায় ৪৫ হাজার ভারতীয় কাজ
করছেন। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে তাঁদের দেশে ফিরে আসতে হতে পারে। অপ্রয়োজনে
এসব দেশ সফরে না যেতে তিনি নাগরিকদের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ইবোলা প্রতিরোধে সতর্কতার অংশ হিসেবে ওই সব দেশ থেকে
যাত্রাবিরতি দিয়ে বা সরাসরি আসা ভ্রমণকারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।