রসুনের উপকারিতার বিষয়টি চিকিৎসা বিজ্ঞানে দিন দিন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ভেষজ এই সব্জিটির গুণের কথা মানুষ অনেক আগেই টের পেয়েছিল। বিশেষত বিজ্ঞানের জনক বলে পরিচিত হিম্পোক্রিটস মানবদেহের ক্যান্সার, ঘা, কুষ্ঠ সারাতে, রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ ও পরিপাকতন্ত্রের হজমজনিত সমস্যা দূর করতে রোগীদের রসুন খাওয়ার পরামর্শ দিতেন।
আধুনিক ভেষজ চিকিৎসকরাও সর্দি, কাশি, জ্বর, ফ্লু, ব্রঙ্কাইটিস, কৃমি, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য পরিপাকের সমস্যাসহ লিভার ও পিত্তথলির নানা উপসর্গ দূর করতে রসুন খাওয়ার পরামর্শ দেন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি মাঝারি সাইজের রসুনে এক লাখ ইউনিট পেনিসিলিনের সমান অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা রয়েছে। শুধু তাই নয়, ব্যাকটেরিয়া ও প্রোটোজোয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি অ্যামিবিক ডিসেনট্রি নির্মূলের ক্ষেত্রে রসুন বেশ কার্যকরী। দেহের রোগ সংক্রমণ দূর করার জন্য একসঙ্গে তিন কোয়া রসুন দিনে তিন থেকে চারবার চিবিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। রক্তের চাপ ও রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর জন্য প্রতিদিন তিন থেকে ১০ কোয়া রসুন খেতে পারেন। তা ছাড়া রসুনের জল সেবন করতে হলে ছয়কোয়া রসুন পিষে এককাপ ঠাণ্ডা পানিতে ৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ভালোভাবে ছেঁকে রসুন জল সেবন করুন।
উচ্চরক্তচাপ ও রক্তের কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধে রসুনের ভূমিকা অপরিসীম। এদিকে রসুনের কেমিক্যাল ব্যবহার করে এবং দুই পর্যায়ের ডেলিভারি পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে ইঁদুরের ক্যান্সার ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। রসুনের এই কেমিক্যাল এ্যালিসিনের জন্যই আমরা রসুনের বিশেষ স্বাদ ও গন্ধ পেয়ে থাকি। রসুনের অক্ষত কোয়ায় এ্যালিসিন পাওয়া যায় না। রসুনের কোয়ার মধ্যবর্তী কম্পার্টমেন্টে জমা থাকা দুইটি পদার্থের বায়োকেমিক্যাল বিক্রিয়ার ফলে এ্যালিসিন তৈরি হয়। এই দুটি পদার্থের একটি হলো এনজাইম এ্যালিনেজ এবং অপরটি স্বাভাবিকভাবে নিস্কিয় কেমিক্যাল এ্যালিইন। যখন রসুনের কোয়া ভেঙে ফেলা হয় তখন যে পর্দা কমপার্টমেন্টগুলোকে আলাদা করে রাখে তা ছিঁড়ে যায় এবং দ্রুত রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এ্যালিসিন তৈরি হয়। অধিকাংশ ক্যান্সার কোষের উপরিভাগে বিশেষ ধরনের রিসেপ্টর থাকে। এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এক ধরনের এ্যান্টিবডি প্রোগ্রাম করেন, যা টিউমার বা ক্যান্সারের বিশেষ রিসেপ্টর শনাক্ত করতে সক্ষম। এই এ্যান্টিবডির সঙ্গে এ্যালিইনেজ এনজাইম জুড়ে দেয়া হয়। রক্তে ইনজেশনের মাধ্যমে এটি প্রয়োগ করা হলে বিশেষ এই এ্যান্টিবডি (এনজাইম সহযোগে) ক্যান্সার কোষের উপরিভাগে অবস্থান নেয়। কিছুটা বিরতিতে দ্বিতীয় উপাদান এ্যালিইম প্রয়োগ করা হয়। স্বাভাবিকভাবে নিস্কিয় এ্যালিইন মলিকিউল ক্যান্সার কোষের উপরিভাগে অবস্থান নেয়া এ্যান্টিবডির এ্যালিইনেজের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে প্রাণঘাতী এ্যালিসিন মলিকিউল তৈরি করে, যা টিউমার কোষে ঢুকে কোষকে ধ্বংস করে দেয়। এ প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক কোষ অক্ষত থাকে। শল্য চিকিৎসার পর ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়া রোধে এ পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর বলে সংশিস্নষ্ট বিজ্ঞানীগণ জানিয়েছেন।
সূত্র : ইন্টারনেট
বার্তা২৪ডটনেট/জিসা থেকে সংগৃহীত।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।