সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: টুথব্রাশ এর ইতিকথা

টুথব্রাশ এর ইতিকথা



টুথব্রাশ বা দাঁতের ব্রাশ হচ্ছে মুখে ব্যবহৃত এক ধরণের উপকরণ। এর সাহায্যে দাঁত ও মাড়ি পরিস্কার করা হয়। সম্মুখের অংশে শক্ত করে থরে থরে সাজানো তন্তু রাখা আছে। হাতলে অল্প নড়াচড়ার মাধ্যমে মুখের অভ্যন্তরে আনাচে-কানাচে তন্তুগুলো প্রবেশ করে দাঁতকে পরিস্কার রাখতে সহায়তা করে। বর্তমানে ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট প্রচলিত আছে। টুথপেস্ট ও টুথব্রাশ একে-অপরের পরিপূরক। এ দু'য়ের মিলিত প্রচেষ্টায় টুথব্রাশিংকে কার্যক্রমকে স্বার্থক ও কার্যকরী করে তোলে। টুথব্রাশ যে-কোন দোকান বা শপিং মলে পাওয়া যায়। টুথব্রাশ বিভিন্ন রংয়ের, আকার-আকৃতির হয়ে থাকে।

ইতিহাসঃ

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ঘোড়ার চুল দিয়ে টুথব্রাশ করতেন

 

সময়ের ব্যবধানে ও আধুনিক উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে টুথব্রাশ সাধারণতঃ কৃত্রিম তন্তু বা সিনথেটিক ফাইবার দিয়ে তৈরী করা হয়। প্রাচীনকালে পশুর পশম দিয়ে টুথব্রাশ তৈরী করা হতো। এখনও পশম দিয়ে তৈরী টুথব্রাশের ব্যবহার বিশ্বের কিছু অংশে দেখা যায়।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ঘোড়ার চুল দিয়ে তৈরী টুথব্রাশের সাহায্যে দাঁত পরিস্কার রাখতেন বলে জানা যায়। তবে আধুনিক সভ্য সমাজে টুথব্রাশ প্রচলনের অনেক পূর্ব থেকেই বহুবিধ উপায়ে মুখের স্বাস্থ্য রক্ষা তথা দাঁতের পরিচর্যা করা হতো। সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন গবেষকদের কাছে টুথব্রাশের পূর্ব-পুরুষ হিসেবে বিভিন্ন উপকরণের বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তন্মধ্যে - লাঠি চিবানো, গাছের চিকন ডাল, পাখির পালক, পশুর হাড় এমনকি প্রাণীদেহের আত্মরক্ষামূলক ধারালো কাঁটা অন্যতম। তৎকালে এগুলোর সাহায্যে টুথব্রাশের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
জানুয়ারি, ২০০৩ সালে জেরোমি এইচ. লেমেলসন এবং ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) এর যৌথ পরিচালনায় আবিস্কারের উপর সূচীকরণ করা হয়। এতে দেখা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা টুথব্রাশকে ১ম স্থানে অভিষিক্ত করেছেন। কেননা, এটি ছাড়া তাঁদের দৈনন্দিন জীবন অপূর্ণাঙ্গ বলে গণ্য হবে।[১]

চিউই স্টিক বা দাঁতনঃ

মানব ইতিহাসের সর্বপ্রথম টুথব্রাশ ব্যবহারের সময় হিসেবে খ্রীষ্টপূর্ব প্রায় তিন হাজার সালকে নির্ধারণ করা হয়েছে। ঐ সময় গাছের চিকন ডালার সম্মুখ অংশকে চেছে দাঁত পরিস্কারের কাজে টুথব্রাশ হিসেবে ব্যবহার করা হতো এবং এটি 'চিউই স্টিক' বা চিবানোর কাঠি বা দাঁতন নামে পরিচিত।
সাধারণতঃ নিম গাছের ডাল বা শাখার ক্ষুদ্র অংশ কেটে নিয়ে এক পাশে সামান্য চিবিয়ে ছিবড়া বানিয়ে নিম-দাঁতন তৈরি করে তা দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা হয়। শহরাঞ্চলে টুথব্রাশের আগমন ও ব্যাপক প্রচলনের ফলে দাঁতনের ব্যবহার কমে গেলেও গ্রামাঞ্চলে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।

 

দাঁত পরিস্কারঃ

মুখের সুস্থতা অনেকাংশেই মুখ পরিস্কার রাখা সংক্রান্ত নিয়মিত চর্চার উপর নির্ভর করে। মুখ পরিস্কার রাখার ফলে দাঁতের ক্ষয়রোগ, গিংগিভিটিজ, পিরিওডন্টাল রোগ, হ্যালিটোসিস বা মুখের দুর্গন্ধ এবং অন্যান্য দন্তজনিত সমস্যা থেকে ব্যক্তি রক্ষা পায়। পেশাদারী এবং ব্যক্তিগত - উভয় পর্যায়েই এ ধরণের সচেতনতা প্রয়োজন। সচেতনভাবে দাঁত ব্রাশ করার পাশাপাশি নিয়মিত দন্তচিকিৎসকের মাধ্যমে দাঁত পরিস্কার করলে দাঁতের ক্যালকুলাস বা টারটার এবং দাঁতে অবস্থানরত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূরীভূত হয়। পেশাদারীভাবে দাঁতের পরিস্কারের জন্য টুথ স্কেলিং করা হয়। এ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রপাতির প্রয়োগ দেখা যায়।
এছাড়াও, টুথব্রাশের সাহায্যে দাঁত পরিস্কার রাখার উদ্দেশ্যই হচ্ছে দাঁতের আবরণ ও ফাঁকা জায়গায় অবস্থানরত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে দূরে রাখা।[২]

 

চিবানো টুথব্রাশঃ

চিবানো টুথব্রাশের স্থিরচিত্র


চিবানো টুথব্রাশ দেখতে ক্ষুদ্র আকৃতির প্লাস্টিক বা কৃত্রিম বস্তুর ছাঁচ দিয়ে তৈরী এক ধরণের টুথব্রাশ। এরজন্যে কোন প্রকার জল বা পানির প্রয়োজন পড়ে না। এটি দেখতে খুবই ছোট প্রকৃতির হলেও গলাধঃকরণ করা যায় না। এটি ভিজানোর দরকার নেই। বাথরুম যন্ত্রপাতি বিক্রয়ে নিযুক্ত দোকানগুলোয় এ ধরণের টুথব্রাশ পাওয়া যায়। চিবানো টুথব্রাশে বিভিন্ন রকমের সুগন্ধি মিশ্রণ হিসেবে মিন্ট বা বাবলগামের মতো উপকরণ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু একবার ব্যবহারের পরই এটি পরিত্যক্ত হয়ে যায় বা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

ব্যবহার বিধিঃ

ব্যক্তি মাত্রেই সঠিকভাবে দৈনিক কমপক্ষে দুই বার টুথপেস্ট সহযোগে টুথব্রাশ বা দাঁতব্রাশ করা উচিত। যদি সম্ভব না হয়, তাহলে অতি অবশ্যই রাতে অন্ততঃ একবার হলেও টুথব্রাশ করতে হবে। শুধুমাত্র দাঁতব্রাশ করাই যথেষ্ট নয়। এর জন্যে সঠিকভাবে ও ধীরে-সুস্থে নিম্নলিখিতভাবে অনুশীলন করতে হবেঃ-
  • একসাথে দুই থেকে তিনটি দাঁতের বাইরের অংশ বা বহিঃভাগে টুথব্রাশ দিয়ে আড়াআড়িভাবে উপরে-নীচে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পরিস্কার করতে হবে।
  • প্রক্রিয়াটি শেষ হলে এবার আড়াআড়িভাবে টুথব্রাশ রেখে পিছনে এবং ভিতরের অংশে উপর-নীচ করার মাধ্যমে দাঁত মাজতে হবে।
  • এবার সামনের দাঁতের পিছনে লম্বাভাবে টুথব্রাশ রেখে ব্রাশের সামনের অংশ দিয়ে উপর-নীচ করতে হবে।
  • অতঃপর, দাঁতের যে অংশ দিয়ে চিবিয়ে খাবার খেতে হয়, সেই অংশসহ স্বাদ গ্রহণকারী অঙ্গ হিসেবে জিহ্বার ভিতরে ও বাইরে পরিস্কার করতে হবে।
  •  

সতর্কতাঃ

অধিকাংশ দন্তবিশারদ বা ডেন্টিস্টগণ শক্ত প্রকৃতির টুথব্রাশের পরিবর্তে নরম ও নমনীয় প্রকৃতির টুথব্রাশ ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কেননা, শক্ত ক্ষুদ্র বা কুঁচি প্রকৃতির তন্তু দিয়ে তৈরী টুথব্রাশের ঘর্ষণে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যায় এবং দাঁতের মাড়িকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে ব্যক্তির মনে যন্ত্রণাদায়ক, অসস্তিকর কিংবা বিরক্তিকর অনুভূতির সৃষ্টি হয়।[৩]
একই সঙ্গে দৈনিক চিনিজাতীয় খাবারও কম গ্রহণ করা উচিত। খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দাঁতের সুস্থতা নিশ্চিত করা যায় ও দাঁতকে সুরক্ষা করার প্রধান উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সচেতনতাঃ

১৮৯৯ সালের স্থিরচিত্রে টুথব্রাশ ব্যবহারের দৃশ্য।

 

ডেন্টিস্ট বা দন্তচিকিৎসকগণ পরামর্শ দেন যে,
  • প্রতিদিন খাদ্য গ্রহণের পর সকালে কিংবা রাতে দু'বার নিয়মিতভাবে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। এর ফলে দাঁতের গঠন সুন্দর ও মজবুত হবে এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে দাঁতের ক্ষয়রোধ করবে।[৪]
  • প্রতি তিন মাস অন্তর টুথব্রাশ পরিবর্তন করা উচিত। অবশ্য ঐ সময়ের পূর্বেই টুথব্রাশ পরিবর্তন করা যেতে পারে।
  • ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট বা মাউথওয়াশ ব্যবহার করা উচিত, যা দাঁতকে আরো সুরক্ষিত রাখবে।
  • প্রতি ছয় মাস পরপর ডেন্টিস্ট বা দন্তচিকিৎসকের নির্দেশমালা অনুসরণ করা উচিত।

সূত্রঃ উইকিপিডিয়া

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।