সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকেরা নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেন। তবে রোগের সঠিক ইতিহাস জানা না থাকলে অনেক সময় অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরও রোগ নির্ণয়ে ভুল হতে পারে। এ সমস্যা সমাধানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক হানিফ সিদ্দিকী ও তাঁর সহযোগী গবেষকেরা রোগ নির্ণয়ের নতুন একটি সফটওয়্যার উদ্ভাবন করেছেন।সম্প্রতি এ সফটওয়্যারবিষয়ক গবেষণা প্রবন্ধটি হংকংয়ে অনুষ্ঠিত জৈব-তথ্যবিজ্ঞানের ওপর আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সেরা প্রবন্ধ হিসেবে মনোনীত হয়েছে।
নতুন এই পদ্ধতিতে কম্পিউটার সফটওয়্যারের মাধ্যমে রোগীর রোগের ইতিহাস যাচাই করে দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় করা যাবে। দীর্ঘদিন ধরে গবেষণার পর এই সফটওয়্যার উদ্ভাবন করেছেন হানিফ সিদ্দিকী। তাঁর মতে, এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসকের গাদা গাদা পরীক্ষার প্রয়োজন হবে না। দু-একটি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা এবং রোগীর রোগের ইতিহাস পর্যালোচনা করে সফটওয়্যারের মাধ্যমেই জানা যাবে কী রোগ হয়েছে। এই পদ্ধতিতে রোগীর ভোগান্তি কমবে। আর্থিক সমস্যা থেকেও মুক্তি মিলবে।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সভাপতি হানিফ সিদ্দিকীকে এ কাজে সহায়তা করেছেন এই বিভাগের দুই শিক্ষার্থী আরিফ ও কামরুল। গবেষক দল সূত্রে জানা গেছে, এ সফটওয়্যারটির মাধ্যমে খুব সহজেই রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি চিকিৎসকেরা রোগীর অতীত উপসর্গগুলোও সংরক্ষণ করতে পারবেন। সফটওয়্যারের কার্যকারিতা প্রসঙ্গে উদ্ভাবক হানিফ সিদ্দিকী বলেন,মানবদেহের জিনের পরিবর্তনের মাধ্যমে দেহের পরিবর্তন হয়। কোনো জিন যখন অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তিত হয় তখন রোগের নানা উপসর্গ দেখা দেয়। আমরা মানবদেহের জিনের কোড, রোগের উপসর্গ এবং জিনের সঙ্গে রোগের সম্পর্ক নির্দেশ করে সফটওয়্যারটি তৈরি করেছি। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসা-বিড়ম্বনা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই এ ধরনের একটি সফটওয়্যার তৈরির চিন্তা শুরু করি। জানা গেছে, এ সফটওয়্যারট্রিমানবদেহের ২২ ধরনের এক হাজার ১২৯টি রোগ এবং এসব রোগের নয় হাজার ৮২৬টি উপসর্গ বা লক্ষণ নিয়ে কাজ করতে পারে। সফটওয়্যারটিতে রয়েছে দুটি দিক। ইনপুট এবং আউটপুট। ইনপুটে রোগের লক্ষণ বা উপসর্গগুলো উল্লেখ করা হলে রোগী সম্ভাব্য কী কী রোগে আক্রান্ত হতে পারে তা আউটপুটে দেখা যাবে। যার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসক সঠিক রোগটি নির্ণয় করতে পারবেন। এ সফটওয়্যার কতটা নির্ভুল রোগ নির্ণয় করতে পারবে জানতে চাইলে হানিফ সিদ্দিকী বলেন, আমরা পরীক্ষা কর্রেদেখেছি রোগের লক্ষণগুলো উল্লেখ করার পর এ সফটওয়্যার দিয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ সঠিক রোগ নির্ণয় করা যায়। প্রসঙ্গক্রমে তিনি জানান, রোগীর ইতিহাস সংরক্ষণের সুযোগ থাকায় এ সফটওয়্যারটি ব্যবহার কর্রেরোগী অতীতে কোন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকলে তাও জানা যাবে।কবে নাগাদ এ সফটওয়্যার বাজারে ছাড়া হবে জানতে চাইলে হানিফ সিদ্দিকী বলেন,আমরা বেশ কয়েজন চিকিৎসকের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছি, তাঁরা এটি ব্যবহার করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ সফটওয়্যারটি আপাতত বাণিজ্যিকভাবে বাজারে ছাড়ার ইচ্ছে আমাদের নেই। তবে এই সফটওয়্যারকে সেবা হিসেবে শিগগিরই চিকিৎসকদের ব্যবহার করার সুযোগ দেব।
সূত্রঃ প্রথম আলো ২২/০১/২০১২ খ্রিঃ।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।