সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: মাংকি ব্রেড ট্রি

মাংকি ব্রেড ট্রি



পানির অপর নাম জীবন। জীবজগতের বেঁচে থাকার জন্য পানির বিকল্প নেই। গাছ-গাছালির ক্ষেত্রেও এর অপরিহার্যতার কোনো বিকল্প নেই। সাধারণত গাছ পানির অভাব সহ্য করতে পারে না। তবে ব্যতিক্রম কিন্তু বিরল নয়। মরুভূমি বা শুষ্ক অঞ্চলে জন্ম নেওয়া বিশেষ প্রজাতির কিছুসংখ্যক গাছ সাধারণ গাছের তুলনায় অন্যরকম। আকৃতিতে যেমন অন্যরকম, ঠিক অন্যরকম স্বভাব-চরিত্রেও। বিশেষত মরুভূমির গাছগুলো একেবারে ভিন্ন ধাঁচের। এরকমই কিছু গাছ আছে যেগুলো শরীরের ভেতর পানি জমিয়ে রেখে আবার পরে সেগুলো ব্যবহার করে শুষ্ক মৌসুমে টিকে থাকে। কিছু কিছু ক্যাকটাসের দেহেও পানি সঞ্চিত থাকে। তবে তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

মরুভূমিতে জন্মে এমন এক গাছ আছে, যা বিশাল একটা পানির ট্যাংকের মতোই। মোট কথা যা তার শরীরে পানির ট্যাংকের চেয়েও বেশি পরিমাণ পানি ধরে রাখতে পারে। আফ্রিকান বাওবাব গাছগুলো এর পেটে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার লিটার পানি জমা রাখতে পারে। এই অদ্ভুত ক্ষমতার জন্য এই গাছগুলোকে জীবনবৃক্ষ নামে আফ্রিকায় ডাকা হয়। মাদাগাস্কারের পাতাঝরা প্রকৃতির এক বিশেষ এই বৃক্ষ বাওবাব। জীবন বাঁচায় বলে এটি মাদাগাস্কারের জাতীয় বৃক্ষের মর্যাদা পেয়েছে। মাদাগাস্কারে মোরনদাভার রাস্তার দুধারে গাছ লাগানো আছে।

অস্ট্রেলিয়ায়ও আছে এই গাছ। মজার ব্যাপার হলো বাওবাব গাছ শুধু নিজের জন্য পানি ধরে রাখে না, আফ্রিকায় প্রচণ্ড খরায় যখন পানির অভাব তীব্র থাকে, তখন স্থানীয় যাযাবর সম্প্রদায় এর সঞ্চিত পানি পান করে জীবন বাঁচায়। এ গাছ না থাকলে খরার সময় কালাহারি মরুভূমির অনেক লোক হয়তো মরেই যেত। ওইসব এলাকার লোকজন খড়ের মতো এক ধরনের ঘাসের ফাঁপা কাণ্ড নল ব্যবহার করে বাওবাব গাছের কাণ্ডে ঢুকিয়ে পানি চুষে খায়। এমনকি খেজুর গাছের মতো সে নল দিয়ে পানি বেরও করে আনে। আবার এ গাছের ফল সেখানকার বানরের অন্যতম খাবার। এ জন্য এ গাছের আরেক নাম 'মাংকি ব্রেড ট্রি'। পূর্ণবয়স্ক একটি বাওবাব গাছ প্রায় ৩০ মিটার লম্বা ও ১১ মিটার চওড়া হয়। এর কাণ্ড বা গুঁড়ি এত মোটা আর ফাঁপা হয় যে, মাটি থেকে পানি শুষে দিব্যি সেই ফাঁপা জায়গায় জমিয়ে রাখতে পারে। গাছের কাণ্ডের আকৃতিও অনেকটা ব্যারেলের মতো, বিশেষ করে গোড়ার দিকটা বেশি মোটা। বাওবাব গাছ বাঁচেও অনেক দিন। আফ্রিকায় হাজার বছর বয়স্ক বাওবাব গাছও নাকি আছে।

বাওবাব গাছ নিয়ে পৌরাণিক কাহিনীও আছে ঢের। প্রাচীন মানুষরা এ গাছকে বলত 'উল্টো গাছ'। কেননা, পাতা ঝরে যাওয়ার পর যে কেউ দেখলে মনে করবে, গাছটি শেকড়-বাকড়সহ উল্টো হয়ে মাটিতে পুঁতে আছে। কথিত আছে, আরব দেশের এক দৈত্য রেগে এ গাছ উপড়ে তা উল্টো করে মাটিতে পুঁতে দিয়েছিল। বাওবাব নিয়ে আরও কিছু মজার কাহিনী আছে। এটিই নাকি ডাঙ্গার প্রথম গাছ। এরপর আসে তাল, সুপারি, নারিকেল। পাম গাছগুলো যখন সরু কাণ্ড নিয়ে তর তর করে লম্বা হয়ে এ গাছকে ছাড়িয়ে যেতে লাগল, তখন বাওবাব পাম গাছের মতো লম্বা হওয়ার জন্য কান্না জুড়ে দিল। এরপর যখন লাল ফুলের শোভা নিয়ে হাজির হলো শিমুল গাছ, তখন বাওবাব গাছ চাইল তার ডালেও যেন ওরকম ফুল ফোটে। এরপর একদিন বাওবাবের দেখা হলো অনন্য সুন্দর ডুমুরের সঙ্গে। বাওবাব চাইল ডুমুরের মতো ফল ধরুক। বাওবাবের এত ইচ্ছার কথা শুনে ঈশ্বর তখন রাগ করে তাকে উপড়ে ফেলেন এবং পরে আবার মাটিতে পুঁতে দিলেন উল্টো করে। সেই থেকে নাকি উল্টো হয়ে জন্মাচ্ছে বাওবাব।
* জুয়েল সরকার  
সূত্রঃ   বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৯ এপ্রিল ২০১২ খ্রিঃ।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।