পৃথিবীতে অনেক প্রজাতি রয়েছে, যা দেখতে ও আচার-আচরণে অন্যরকম। তেমন এক প্রজাতি হচ্ছে গিরগিটি। গিরগিটি ঘনঘন রঙ পাল্টায়। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই কাটায় একটি নিদিষ্ট স্থানে একাধারে বসে থাকে। এ সরীসৃপ তাগুহীন প্রতীক্ষা, বিশ্ব একে কি দেয় তা দেখা এবং চারদিকে এর চোখ খোলা রাখা পছন্দ করে। ক্ষুদ্রাকৃতির এ সরীসৃপের রয়েছে যথার্থই বিশেষ ধরনের চোখ। যার ফলে এটা একই সময়ে দুই পৃথক অবস্থানে দৃষ্টিপাত করতে পারে।
আকারে বড় পরস্পর থেকে স্বতন্ত্র, চঞ্চল দুটি চোখ খাবারের সন্ধানে দ্রুত এদিক-ওদিক দৃষ্টি ফেলে। কখনো এমন হয়, গিরগিটির এক চোখ হয়তো সামনে তাকায় এবং অন্যটি প্রাণীটির পেছন দিয়ে কি যাচ্ছে তা লক্ষ্য করে। বহুরূপী গিরগিটি দুটি চোখ চক্রাকারে ক্লান্তিহীন দৃষ্টিপাত করে এবং উপযোগী শিকার দৃষ্টিগোচর না অবধি থাকে অনড়। শিকার চোখে পড়ামাত্রই সরীসৃপটি হামাগুঁড়ি দিয়ে গুটি গুটি পায়ে এগোয় সামনের দিকে। এটি শিকারকে নাগালের মধ্যে পাওয়ার অবস্থানে এসে এর ল্যান্সের মতো বিশেষ জিহ্বা ছুড়ে দিয়ে স্বাভাবিক দ্রুততায় খাবার গিলে ফেলে। ক্ষুদ্র প্রজাতির গিরগিটিরা খায় মশা, মাছি, ফড়িং ও মাকড়সা জাতীয় পোকামাকড়। বড় প্রজাতিগুলো এদের ঘাতক জিহ্বার ফাঁদে ক্ষুদ্রকৃতির পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলোও গিলে ফেলতে পারে। বিশ্বে গিরগিটি ৮০ প্রজাতির। এগুলো বেশির ভাগেরই বাস আফ্রিকায়। ভারত ও শ্রীলঙ্কায় ক্যামিলিয়া জেলানিকাস পাওয়া যায়। এ সরীসৃপগুলো এদের গাত্র রং দ্রুত পাল্টানোর জন্য সুপরিচিত এবং এ ধরনের দক্ষতা সম্পর্কে প্রচলিত আছে অনেক কথা। এ সম্পর্কে এমনি একটি অলিক কাহিনী রয়েছে, এক সময় একটি গিরগিটিকে রাখা হয়েছিল লাল, হলুদ ও সবুজ রংয়ের ডোরাকাটা একখণ্ড বস্ত্রের ওপর। সরীসৃপটি বস্ত্রখণ্ডটির রংয়ের ধরনের সঙ্গে মিল রেখে এবং গাত্রবর্ণ পাল্টানো সত্ত্বেও পরে মনোকষ্টে এর মৃত্যু হয়।
গিরগিটি কেন বা কিভাবে এর গোত্রবর্ণ পাল্টায় সে সম্পর্কে এখনো অবধি সঠিক কিছু জানা যায়নি। তবে এখন ধারণ করা হয়, এ সরীসৃপ অবস্থানের প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রং পাল্টায় না। আলো, তাপের তীব্রতা এমনকি আপন আবেগে সাড়া দিয়ে এ প্রাণীর ত্বক ভিন্নতর রং ধারণ করে। একটি ক্ষুদ্র গিরগিটি আরেকটির মুখোমুখি হলে উভয়ই দ্রুততার সঙ্গে উজ্জ্বলতার কৃষ্ণাভা ছড়িয়ে দেয়। গিরগিটির দেহে রয়েছে বিশেষ রংয়ের কোষের চারটি স্তর। সেগুলো অবস্থান এ প্রাণীর ভেদ্য ত্বকে। এগুলো থেকেই গিরগিটি এত অধিক ভিন্নতর রং ধারণ করতে সক্ষম হয়। নবীন চৌধুরী
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, ৪এপ্রিল ২০১২ খ্রিঃ।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।