সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: আবর্জনার হোটেল!

আবর্জনার হোটেল!



বিচিত্র এ পৃথিবীতে বিচিত্র সব মানুষের বসবাস। একেকজনের একেক শখ, একেকজনের একেক ইচ্ছা। কারও ইচ্ছা ইতিবাচক, আবার কারোরটা নেতিবাচক। কারও কারও ইচ্ছা আবার চমকপ্রদ। এমনই এক ইতিবাচক ও চমকপ্রদ সৃষ্টি হচ্ছে আবর্জনার হোটেল। জার্মানির এইচ এ শুল্ট। তার ব্যতিক্রমী চিন্তা আর কাজের মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ওঠে এসেছেন। তার ইতিবাচক কাজটি হচ্ছে, তিনি তার নিজের কাঁধেই নিয়েছেন পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব।

শুল্ট পেশায় একজন শিল্পী। শিল্পীরা স্বভাবতই প্রকৃতিপ্রেমিক হয়। কিন্তু তার মতো ব্যতিক্রমী প্রকৃতিপ্রেমিক হয়তো পৃথিবীতে আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ৪০ বছর ধরে তিনি দেখছেন কিভাবে মানবসভ্যতা পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। নানা কারণে পৃথিবীর পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। মানুষ ময়লা-আবর্জনা ফেলে পৃথিবীকে ডাস্টবিন বানিয়ে ফেলছে। নদী-সাগর উপচে পড়ছে বর্জ্যে। এভাবে বর্জ্য ফেললে পৃথিবী আর টিকবে না। তাই পরিবেশ বাঁচাতে মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে তিনি গ্রহণ করেছেন এক পদক্ষেপ। তবে মজার ব্যাপার হলো তার পদক্ষেপটা খুবই ব্যতিক্রমী।

সমুদ্র সৈকত থেকে তিনি কুড়িয়ে এনেছেন টন টন বর্জ্য। আর সেই বর্জ্য দিয়ে তৈরি করেছেন একটি হোটেল। তার তৈরি করা এ ধরনের হোটেল হয়তো বিশ্বে এটিই প্রথম। হোটেলটি নির্মাণ করা হয়েছে রোমে। সঠিক পরিকল্পনা আর উদ্ভাবনী মন থাকলে তুচ্ছ জিনিস থেকেও তৈরি করা যায় মহৎ কিছু। তার প্রমাণ দিয়েছেন শুল্ট। শুল্ট নিজেই একজন শিল্পী। সুতরাং তিনি শৈল্পিক মন দিয়ে গড়ে তুলেছেন তার হোটেলটি। এ ব্যক্তি বুকে ধারণ করে আছেন পৃথিবীর প্রতি অগাধ ভালোবাসা। তাই তিনি পৃথিবীর অন্তত কিছু এলাকা হলেও বর্জ্যের হাত থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে উপায় খুঁজছিলেন কিভাবে পৃথিবীর বর্জ্য সরানো যায়। এ ভাবনায়ই তার মাথায় বুদ্ধি আসে যদি বর্জ্যগুলো সরানোর বদলে সৌন্দর্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে পৃথিবীর বর্জ্যও পরিষ্কার হবে আবার সৌন্দর্যেরও বৃদ্ধি ঘটবে। এরপর তিনি ভাবতে থাকেন কিভাবে বর্জ্যগুলো সৌন্দর্যে রূপান্তরিত করা যায়। দীর্ঘ চিন্তার পর তিনি বর্জ্যগুলোকে সৌন্দর্যে রূপ দিতে তৈরি করেন একটি আবর্জনার হোটেল। ইতালির রোমে তিনি আবর্জনার যে হোটেলটি বানিয়েছেন, তার তিনটি কক্ষ সাজাতে তিনি ব্যবহার করেছেন ১২ টন বর্জ্য। বিয়ারের ক্যান, গাড়ির টায়ার, সংবাদপত্র, কাগজ, জুতা-মোজা, ক্যামেরা, ফুটবল_ কি নেই এর মধ্যে! এসব টন টন বর্জ্য তিনি জোগাড় করেছেন ইউরোপের বিভিন্ন সমুদ্র সৈকত এবং বিশ্বের নানা স্থান থেকে। এরপর পরিশোধনের জন্য তা পাঠান জার্মানিতে। পরে তা ফিরিয়ে নেওয়া হয় রোমে এবং এ আবর্জনা দিয়েই তিনি তৈরি করেন সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি হোটেল। পরিবেশ বাঁচানোর জন্য মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যেই শুল্টের এ প্রয়াস। তিনি চান মানুষ দেখুক পরিমাণ বর্জ্য তারা প্রতিদিন উৎপাদন করে। তার ভাষায়, একটা বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। প্রতিদিন আমরা শত শত টন বর্জ্য তৈরি করছি। আমাদের পতনে বেশি দেরি নেই। আবর্জনা নিয়ে শুল্টের কাজ এই প্রথম নয়। সেই ষাটের দশক থেকে শুরু করে পরিবেশের জন্য বিভিন্ন কাজ করে চলেছেন শুল্ট। তার উল্লেখযোগ্য আরেকটি সৃষ্টিকর্ম হচ্ছে 'বর্জ্য মানব'। বর্জ্য দিয়ে তৈরি মানবাকৃতির এ ভাস্কর্যগুলো স্থাপন করা হয়েছে রোম, নিউইয়র্ক, মস্কোসহ বিভিন্ন শহরে। বিশ্বজুড়ে বর্জ্য উৎপাদনের প্রতিবাদ হিসেবে তিনি তৈরি করেছেন এই শিল্পকর্মগুলো। তার এই অদ্ভুত প্রতিবাদে পৃথিবীর মানুষজন সচেতন হবে এটিই আশা করেন শুল্ট।


সূত্রঃ   বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৯ মে ২০১২ খ্রিঃ।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।