সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: সুন্দরের লীলাভূমি রাঙামাটি

সুন্দরের লীলাভূমি রাঙামাটি



চোখ জুড়ানো প্রকৃতির সৌন্দর্যের আধারে ঘেরা বৈচিত্র্যময় পর্যটন নগর রাঙামাটি। দিগন্তজুড়ে বিস্তৃত সবুজের সমারোহ। যেদিকে চোখ যায় স্বচ্ছ পানি আর বিস্তীর্ণ সবুজের হাতছানি। এলোমেলো সারিতে সাজানো উঁচু-নিচু ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়। আঁকাবাঁকা কাপ্তাই লেক। চারদিকে স্বচ্ছ জলধারা। প্রকৃতির অদ্ভুত সৌন্দর্যের আধারে মিলিয়ে যেতে কার না মন চায়। কর্মব্যস্ততার ফাঁকে দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা ছুটে আসে পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটি। বর্ষা মৌসুমে পর্যটকের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। কারণ বৃষ্টির পানিতে কাপ্তাই হ্রদে নৌ-ভ্রমণ আর ঝরনা স্পটগুলো ঘুরে বেড়াতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে হাজার হাজার পর্যটক।


রাঙামাটির মূল শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের হলিডে কমপ্লেঙ্। ১৯৭৮ সালে পর্যটন করপোরেশন মূল মোটেলটি এবং ১৯৮৬ সালে আধুনিক অডিটোরিয়াম ও দুটি পাহাড়ের সংযোগ দেওয়া কাপ্তাই হ্রদের উপর ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করা হয়। ৩৩৫ ফুট দীর্ঘ মনোরম ঝুলন্ত সেতুটি পর্যটন কমপ্লেঙ্রে গুরুত্ব ও আকর্ষণ অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

তাছাড়া ২০০৮ সালে রাঙামাটি পর্যটন কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে পাহাড়ের আদিবাসীদের ঘরের সঙ্গে খাপ খাইয়ে একটি ট্রাইবেল হানিমুন কটেজও তৈরি করে। বাঁশ আর কাঠের উপকরণে উপজাতীয় আদলে তৈরি কটেজটির নাম রাখা হয়েছে 'মধুচন্দ্রিমা' রাঙামাটি পর্যটন মোটেল ও হলিডে কমপ্লেক্স ব্যবস্থাপক আখলাকুর রহমান বলেন, কমপ্লেঙ্রে মূল মোটেলে এসি (ডবল) রুম ১২টি এবং নন-এসি (ডবল) রুম রয়েছে ১৮টি। ভাড়া এসি (ডবল) ১৯০০ টাকা এবং নন-এসি (ডবল) ৯০০ টাকা। এ ছাড়া সিঙ্গেল রুম রয়েছে। এসি কটেজের ভাড়া ৫ হাজার টাকা এবং নন-এসি কটেজের ভাড়া আড়াই হাজার টাকা। কমপ্লেক্স নির্মিত হচ্ছে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে সুইমিংপুল সংবলিত পাঁচ তারকা মানের একটি মোটেল।'


১৯৬০ সালে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীর ওপর দিয়ে কাপ্তাইয়ে বাঁধ নির্মাণের ফলে সৃষ্টি হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলরাশি বিশাল কাপ্তাই লেক। যার আয়তন প্রায় ৭০০ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। এর উত্তরে খাগড়াছড়ি, দক্ষিণে বান্দরবান, পূর্বে ভারতের মিজোরাম রাজ্য আর পশ্চিমে চট্টগ্রাম জেলা। জেলার মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি কন্যা কর্ণফুলী নদী। মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। যার উৎপত্তিস্থল ভারতের মিজোরাম রাজ্যের লুসাই পাহাড়। কর্ণফুলী থেকে উৎপত্তি হয়েছে চেঙ্গী, মাইনি, কাচালং, সুবলং, রাইংখিয়ং, বরকল, হরিণা নদী। এসব নদী মিশেছে কাপ্তাই লেকে।


রাঙামাটি শহর থেকে ১৫-১৬ কিলোমিটার দূরে সুবলং ঝরনা। বরকল উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান এ ঝরনার। ইতোমধ্যে যার দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি ঘটেছে। পাহাড়ি ঝরনার শীতল, চঞ্চলা জলধারা সব পর্যটককেই কাছে টানে। ঝরনাগুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ নৈসর্গিক সৃষ্টি। রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড়ি ঝরনা থাকলেও নয়নাভিরাম সব ঝরনার সমাবেশ বরকলের সুবলংয়েই দৃশ্যমান। যা দেখে হৃদয়-মন জুড়ে সৃষ্টি করে শিহরণ। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে স্পটটি। কলকল ঝরনাধারার পানিতে গা ভিজিয়ে আনন্দে হারিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য ভ্রমণপিপাসু নারী-পুরুষ। ঝরনাস্থল এখন যেন আনন্দ-উৎসবের ফোয়ারা। চারদিক ঘিরে রেখেছে সবুজ পাহাড়। মাঝখানে টলটলে কাপ্তাই হ্রদ। হ্রদ ঘেঁষে পাহাড়ের কোল বেয়ে নেমে এসেছে অপূর্ব সুন্দরী সুবলং পাহাড়ি ঝরনা। তাকালেই জুড়িয়ে যায় হৃদয়-মন। যা না দেখলে কল্পনায় আলপনা আঁকা যাবে না। গিরি নির্ঝর বড় ঝরনাটিসহ কাছাকাছি রয়েছে ৮টি ঝরনাধারা। তার মধ্যে মূল ঝরনাধারাটি সত্যিই আকর্ষণীয়। এ ঝরনাটিকে কেন্দ্র করে বরকল উপজেলা প্রশাসন গড়ে তুলেছে পর্যটন স্পট। এটি বছরজুড়ে সময় পর্যটকদের পদভারে মুখরিত থাকে। প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু এ ঝরনার বর্ষাকালে অবিরাম জল পড়ার ধ্বনি অপরূপ দৃশ্যের অবতারণা সৃষ্টি করে। তবে শুষ্ক মৌসুমে ঝরনার জলধারা শুকিয়ে যায়। বর্তমানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সে অপরূপ দৃশ্য বজায় রয়েছে। যা দেখতে পর্যটকরা ছুটছেন প্রতিদিন। এ ঝরনাধারা দেখতে হলে রাঙামাটি শহর থেকে ইঞ্জিনবোট অথবা স্পিডবোট রিজার্ভ করে যেতে হয়। ইঞ্জিনবোট নিয়ে যেতে সময় লাগে আসা-যাওয়া প্রায় ৩ ঘণ্টা। রিজার্ভ করলে ভাড়া দিতে হবে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। আর স্পিডবোট নিয়ে যেতে হলে আসা-যাওয়ায় সময় লাগবে পৌনে এক ঘণ্টার মতো। ভাড়া দিতে হবে ৩-৪ হাজার টাকা। আবাসিক হোটেলগুলোতে উপচেপড়া ভিড়। রয়েছে অগ্রিম বুকিং। আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত সুবলং ঝরনার অবিরাম কলকল ধ্বনি সবার দৃষ্টি কাড়ছে।

রাঙামাটি জেলাজুড়ে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। এখন ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের বেড়ানোর ভরা মৌসুম। কাপ্তাই লেকে নৌ-ভ্রমণের জন্য রয়েছে স্পিডবোট, প্যাডেলবোট ও ইঞ্জিনবোটের সুবিধা। ভাড়াও সুলভ। শহর থেকে চার কিলোমিটার পূর্বে বালুখালিতে গড়ে উঠেছে সরকারি কৃষি বিভাগের কৃষি ফার্ম, বেসরকারি পর্যটন স্পট টুকটুক ইকোভিলেজ, পেদাটিংটিং ও চাংপাং রেস্টুরেন্ট। এছাড়া রয়েছে ডিসি বাংলো, গিরিশোভা ভাসমান রেস্তোরাঁ, পৌর পার্ক, সুখী নীলগঞ্জ, উপজাতীয় জাদুঘর, রাজবন বিহার, চাকমা রাজার বাড়ি। প্রায় ছয়-সাত কিলোমিটার নদীপথের দূরত্বে জেলার বরকল উপজেলার সুবলং ইউনিয়নে রয়েছে মনোরম সুবলং ঝরনা স্পট। শহরের উত্তরে নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাটে স্থাপিত হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফের স্মৃতিসৌধ। এসব স্থানে যেতে হলে রিজার্ভ করে নিতে হবে স্পিডবোট অথবা ইঞ্জিনবোট। বোট নিয়ে গেলে একসঙ্গে উপভোগ করা যায় পাহাড়, স্বচ্ছ জলধারা, নৌ-ভ্রমণ, দর্শনীয় স্পটগুলো পরিদর্শনসহ অনেক কিছু।

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, ০৭ জুলাই ২০১২ খ্রিঃ।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।