সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: বিদ্যুৎমানব!

বিদ্যুৎমানব!



বিদ্যুৎ তার মর্জিতে রীতিমতো ওঠেবসে। প্রয়োজনে দেহে তৈরি করতে পারেন অস্বাভাবিক তাপ। দাঁতের কামড়ে জ্বালাতে পারেন বাল্ব। পানি গরম করতে বা সসেজ রাঁধতে দরকার হয় না চুলার। পাজকিচের দুটি হাতই যথেষ্ট। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে এটি একজন মানুষের কাজ।


নাম তার পাজকিচ। ৫৪ বছর বয়সী এই সার্বিয়ান লোকটি অত্যাশ্চর্য এক ক্ষমতার অধিকারী। যেখানে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার মানুষ তড়িতাহত হয়ে মৃত্যুবরণ করছে সেখানে পাজকিচের দেহেই রয়েছে বিদ্যুৎ। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য পাজকিচ তার দেহে উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎ প্রবাহিত করতে পারেন। শুধু তাই নয়, বিদ্যুৎ জমা করেও রাখতে পারেন ব্যাটারির মতো। পাজকিচের বসবাস সার্বিয়ার পোজারেভাক শহরে। বিশ্বের অন্যান্য আট-দশটি শহরের মতো এই শহরেও লোডশেডিং হয়। আর লোডশেডিং এ শহরটি অন্ধকারে ডুবে গেলেও পাজকিচের বাড়িতে ঝলমল করে আলোয়। প্রচণ্ড শীতে রাস্তাঘাট বরফে ঢেকে গেলে বন্ধুরা হানা দেন তার বাড়িতে। পাজকিচের 'উষ্ণ' আলিঙ্গনে বশ মানে হাড় কাঁপানো শীত। স্লাভিসা পাজকিচের বাড়িতে আলোর অভাব হয় না কোনো দিনই। ৫৪ বছর বয়সী এই সার্বিয়ান অত্যাশ্চর্য এক ক্ষমতার অধিকারী। দেহে প্রবাহিত করতে পারেন উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ জমা করেও রাখতে পারেন ব্যাটারির মতো।

বিজ্ঞানের বহু বাঘা পণ্ডিতকে তিনি দ্বন্দ্বে ফেলে দিয়েছেন। দেশের লোকে অবশ্য আদর করে 'ব্যাটারি-মানব' নামেই ডাকে তাকে। ১৭ বছর বয়সে তিনি কারখানায় কাজ করার সময় প্রথম নিজের দেহে এই অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য টের পান। সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল। তার কয়েকজন সহকর্মী অলসভাবে রেলিংয়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎ ছিটকে সরে এলেন সবাই। ধাতব রেলিং বিদ্যুতায়িত হয়ে গেছে! কৌতূহলবশত পরখ করতে এগিয়ে গিয়েছিলেন পাজকিচ। বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলেন, অন্যদের মতো কোনো অস্বাভাবিকত্ব টের পাচ্ছেন না। কয়েক দিনের মাথায় পাজকিচ আবিষ্কার করলেন, বৈদ্যুতিক প্লাগে হাত দিয়ে বসে থাকলেও কোনো ক্ষতি হয় না শরীরের। শুধু তাই নয়, বিদ্যুৎ তার মর্জিতে রীতিমতো উঠেবসে। প্রয়োজনে দেহে তৈরি করতে পারেন অস্বাভাবিক তাপ। দাঁতের কামড়ে জ্বালাতে পারেন বাল্ব। পানি গরম করতে বা সসেজ রাঁধতে দরকার হয় না চুলার। পাজকিচের দুটি হাতই যথেষ্ট।

গিনেস বুকে দুটি ভিন্ন রেকর্ডের পাশে নাম তুলেছেন পাজকিচ। প্রথমবার ১৯৮৩ সালে। সাধারণ মানুষ যেখানে ৫০ ভোল্ট বিদ্যুতেই কাবু হয়ে যায়, সেখানে তিনি ২০ হাজার ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবাহিত করেছিলেন শরীরের মধ্য দিয়ে। ২০ বছর পর ২০০৩ সালে এক কাপ পানির তাপমাত্রা উন্নীত করেন ৯৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সময় লেগেছিল মাত্র এক মিনিট সাঁইত্রিশ সেকেন্ড। এক মিলিয়ন ভোল্টের জেনারেটর চার্জ করে শীঘ্রই আরও একটি রেকর্ড বগলদাবা করার ইচ্ছা আছে তার। আঙ্গুল থেকে লেজার রশ্মি ছোড়ার কায়দাও রপ্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকের সামনে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন পাজকিচ। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন কিভাবে একজন মানুষের দেহ বিদ্যুতের সঙ্গে এভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। অনেকে বলেন, এটার কারণ জিনগত। তা ছাড়া পরীক্ষায় দেখা গেছে, তার দেহে ঘামগ্রন্থি নেই। তাই বিজ্ঞানীরা ভাবছেন দেহ নয় বরং ত্বকই পাজকিচের বিদ্যুৎ প্রবাহের কাজ করে। অপূর্ব এই ক্ষমতার প্রদর্শনীই এখন পাজকিচের পেশা। মানুষ বলে বিদ্যুৎ কারও বন্ধু হতে পারে না, কথাটা আমার বেলা প্রযোজ্য নয়। অদ্ভুত এ পৃথিবীতে বৈদ্যুতিক মানব পাজকিচের অস্তিত্ব সত্যি অবাক করার মতো।

* জুয়েল সরকার
সূত্রঃ বাংলাদেশপ্রতিদিন, ১৬ জুলাই ২০১২ খ্রিঃ

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।