বাংলাদেশের আইন সভার নাম হচ্ছে জাতীয় সংসদ। নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা এখানেই বসে দেশের নীতি নির্ধারণ করেন, আইন পাস করেন। প্রত্যেক দেশেরই নিজস্ব সংসদ ভবন আছে। তম্মধ্যে আমাদের সংসদ ভবনটি আমাদের কাছে একটু আকর্ষনীয় বটে। বিশেষ করে এর স্থাপত্য শিল্প যেকোন কারো মনযোগ আকর্ষন করতে সক্ষম।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবনের স্থপতি লুই আই কান (এস্তোনীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক)। জাতীয় সংসদ ভবনের নির্মাণ কাজের ব্যয় হয়েছিল ১৯৭ কোটি টাকা। ২০৮ একর জমির ওপর নির্মিত এই সংসদ ভবনটি তিনতলাবিশিষ্ট। এর উচ্চতা হচ্ছে ১৫৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবন উদ্বোধন করা হয় ২৮ জানুয়ারি ১৯৮২ সালে। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার এর উদ্বোধন করেন।
জাতীয় সংসদের ইংরেজি নাম 'হাউস অব দ্য নেশন অব বাংলাদেশ'। জাতীয় সংসদ ভবনের প্রতীক হচ্ছে শাপলাফুল। এটি এক কক্ষবিশিষ্ট। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের মোট সদস্যসংখ্যা হচ্ছে ৩৫০টি। বর্তমানে সংসদের নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৫০টি এবং ১৯৭৩ সালে নারীদের সংরক্ষিত আসন ছিল ১৫টি, জাতীয় সংসদে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সদস্যসংখ্যা হচ্ছে ৩০০টি। জাতীয় সংসদে পূর্বে অধিবেশন বসত তেজগাঁওস্থ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের সংসদ নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কোনো বিদেশি প্রথম আমাদের জাতীয় সংসদে ভাষণ দেন যুগোস্লাভিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মার্শাল জোসেফ টিটো, ৩১ জানুয়ারি ১৯৭৪। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ৬০ জনকে নিয়ে কোরাম গঠিত হয়ে থাকে। গণভবন ও বঙ্গভবন হচ্ছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের বাসভবন।
সংসদের আসন ব্যবস্থাঃ সংসদ সদস্যদের জন্য আসন সংখ্যা ৩৫৪টি, বিশিষ্ট অতিথিদের জন্য আসন সংখ্যা ৫৬টি, কর্মকর্তাদের জন্য আসন সংখ্যা ৪১টি।
অবস্থান
ঢাকার শের-এ-বাংলা নগরে
অবস্থিত জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্সকে ঘিরে রয়েছে চারটি প্রধান সড়ক:
·
উত্তর দিকে লেক রোড;
·
পূর্ব দিকে রোকেয়া সরণী;
·
দক্ষিণ দিকে মানিক মিয়া এভিনিউ এবং
·
পশ্চিম দিকে মিরপুর রোড।
ফলে সংসদ অধিবেশন চলাকালে
যানবাহন চলাচল ও সহজে চলাচল নিয়ন্ত্রন করা সম্ভবপর হয়। মূল ভবনটি (সংসদ ভবন) মূলতঃ
তিন ভাগে বিভক্ত:
·
মেইন প্লাজা : ৮২৩,০০০ বর্গফুট (৭৬,০০০ বর্গমিটার)
·
সাউথ প্লাজা : ২২৩,০০০ বর্গফুট (২১,০০০ বর্গমিটার)
·
প্রেসিডেন্সিয়াল প্লাজা : ৬৫,০০০ বর্গফুট
(৬,০০০ বর্গমিটার)
মূল ভবনটি কমপ্লেক্সের
কেন্দ্রে অবস্থিত। এমপি হোস্টেল এবং জরুরী কাজে ব্যবহৃত ভবনসমূহ কমপ্লেক্সের
বহির্ভাগে অবস্থিত। মূল ভবন ঘিরে অবস্থিত কৃত্রিম হ্রদ, দুটি বাগান এর মাঝের শূণ্যস্থান পূরণ করেছে।
মূল ভবনের নকশা
মূল ভবনটি নয়টি পৃথক ব্লক দিয়ে তৈরী: মাঝের অষ্টভূজ
ব্লকটির উচ্চতা ১৫৫ ফুট এবং বাকি আটটি ব্লকের উচ্চতা ১১০ ফুট। প্রতিটি ব্লকের
জায়গাকে বিভিন্ন কাজের ভিত্তিতে ভাগ করা হয়েছে, করিডোর, লিফট, সিড়ি ও বৃত্তাকার পথ দিয়ে আনুভূমিক ও উলম্বিকভাবে
ব্লকগুলোর মাঝে আন্তঃসংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। পুরো ভবনটির নকশা এমনভাবে প্রনয়ন
করা হয়েছে যাতে সব ব্লকগুলোর সমন্বয়ে একটি ব্লকের অভিন্ন স্থান হিসাবে ব্যবহার
করা যায়।
দ্বিতীয় তলার একটি লাগোয়া ব্লকে প্রধান কমিটির
রুমগুলো রয়েছে। সকল ধরনের সংসদীয় কার্যক্রম, মন্ত্রী, চেয়ারপারসন এবং
স্ট্যান্ডিং কমিটির অফিস রয়েছে এই ভবনে। একই ভবনে সংসদীয় সচিবের জন্যও কিছু অফিস
বরাদ্দ রয়েছে।
মেইন প্লাজা
মেইন প্লাজার মূল অংশটি হচ্ছে সংসদ অধিবেশন কক্ষ।
এখানে একই সময়ে ৩৫৪ জন সদস্যের সংস্থান রাখা হয়েছে। ভিআইপিদের জন্য দুইটি
পোডিয়াম এবং দুইটি গ্যালারী রয়েছে। পরাবৃত্তাকার ছাদসম্পন্ন অধিবেশন কক্ষটির
উচ্চতা ১১৭ ফুট। ছাদটি স্বচ্ছভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে দিনের আলো এতে প্রবেশ করতে
পারে। সূর্যের আলো চারদিকের ঘেরা দেয়াল ও অষ্টভূজকৃতির ড্রামে প্রতিফলিত হয়ে
অধিবেশন কক্ষ প্রবেশ করে। (আলোর নান্দনিকতা ও সর্বোচ্চ ব্যবহার লুই কানের স্থাপত্য ক্ষমতার
নিদর্শনস্বরূপ।)
কৃত্রিম আলোকে এমনভাবে বিভক্ত করা হয়েছে যে সূর্যের
আলোর প্রবেশের ক্ষেত্রে তা কোনো বাধার সৃষ্টি করতে পারে না। শ্যান্ডেলির বা
ঝাড়বাতিগুলো পরাবৃত্তাকার ছাদ হতে নিচে নেমে এসেছে। এর গঠনশৈলীতে ধাতুর ব্যবহার
প্রতিটি আলোক উৎসর ভিত্তি হিসাবে কাজ করে।
উপরের অংশের অভ্যাগত এবং গণমাধ্যমের জন্য গ্যালারীর ব্যবস্থা
রয়েছে। এছাড়াও এর বিভিন্ন অংশে রয়েছে:
·
প্রথম
তলায়, একটি গ্রন্থাগার;
·
তৃতীয়
তলায়, সংসদ সদস্যদের জন্য লাউঞ্জ এবং
·
উপর
তলায়, মিলনায়তন;
সাউথ প্লাজা
দক্ষিণ দিকে মানিক মিয়া এভিনিউর অভিমুখে সংসদ ভবনের
সাউথ প্লাজা অবস্থিত। এর ক্রমোচ্চ (Gradually rises) ২০' উচ্চতার ভবন
কাঠামো সৌনর্য বর্ধনের পাশপাশি সংসদ ভবনের মূল প্রবেশ পথ (অধিবেশন চলাকালে) হিসাবে
ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এখানে আরো রয়েছে:
·
নিয়ন্ত্রিত
প্রবেশপথ;
·
ড্রাইভওয়ে;
·
প্রধান
যন্ত্রপ্রকৌশল কক্ষ;
·
গাড়ি
পার্কিং-এর জন্য বিস্তৃত পরিসর;
·
টেলিফোন
এক্সচেঞ্জ;
·
রক্ষনাবেক্ষণ
কাজে নিয়োজিত প্রকৌশলীদের অফিসকক্ষ;
·
উপকরণ
সরঞ্জাম রাখার স্থান; এবং
·
মূল
ভবনে যাওয়ার জন্য উম্মুক্ত চত্বর;
প্রেসিডেন্সিয়াল প্লাজা
উত্তর দিকে অবস্থিত প্রেসিডেন্সিয়াল প্লাজা সম্মুখে
লেক রোড অবস্থিত। এই প্লাজা সংসদ সদস্য এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের জন্য
ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মার্বেলের তৈরি মেঝে, গ্যালারী এবং খোলা পথ এই প্লাজার নির্মাণশৈলীর বৈশিষ্ট্য।
জাতীয়
সংসদ ভবন
|
|
|
|
সাধারণ
তথ্য
|
|
ধরন
|
জাতীয় সংসদ ভবন
|
স্থাপত্য স্টাইল
|
|
অবস্থান
|
|
নির্মাণ শুরু হয়েছে
|
১৯৬১
|
সম্পূর্ণ
|
১৯৮২
|
মূল্য
|
|
প্রযুক্তির
বিস্তারিত
|
|
কাঠামোগত পদ্ধতি
|
কনক্রিটের, ইটের তৈরি
|
নকশা
এবং নির্মান
|
|
স্থপতি
|
একনজরে জাতীয় সংসদ ভবন
সাংবাদিকদের জন্য আসন সংখ্যাঃ ৪০টি।
দর্শকদের জন্য আসন সংখ্যাঃ ৪৩০টি
পার্টি কক্ষ ৩টিতে মোট আসন সংখ্যাঃ ১৫ হাজার ৪৪০টি
সর্বমোট আসন সংখ্যাঃ ১৬ হাজার ৩৬১টি
স্থপতিঃ লুই আই কান
ছাদ ও দেয়ালের স্ট্রাকচারাল ডিজাইনারঃ হ্যারি ব্লুম
সংসদ ভবনের উচ্চতাঃ ১৫৫ ফুট ৮ ইঞ্চি
দেয়ালের ব্যাসঃ ১র্২ -২র্৪র্
কার্পেট এলাকাঃ ২ লাখ ৫০ হাজার ঘনফুট
প্যাসেজ ও চলাচলের এলাকাঃ ২ লাখ ৮৭ হাজার ঘনফুট
টয়লেট ও ডাস্টঃ ৯০ হাজার ঘনফুট
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এলাকাঃ ৪ লাখ ৮৬ হাজার ঘনফুট
দরজাঃ ১৬৩৫টি
জানালাঃ ৩৩৫টি
সিঁড়িঃ ৫০টি
টয়লেটঃ ৩৪০টি
লিফটঃ ১৮টি।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।