দিনেশ দিবেদি |
‘লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়া
চড়ে সে।’ ছোটবেলায় পড়া বাক্যটি এবার বুঝি উল্টো হতে
চলল।
কারণ, লেখাপড়া করে গাড়িঘোড়ায় চড়া তো দূরের কথা, পেট চালানোর তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিতে হয়েছে এক স্কুলশিক্ষককে। অবিশ্বাস্য হলেও ঘটনাটি সত্য।
ভারতের রাজস্থান রাজ্যের জয়পুরে দিনেশ দিবেদি পেশায় স্কুলশিক্ষক ছিলেন। অবসর নিয়েছেন অনেক দিন হয়। ৫০ বছর বয়সের এই স্কুলশিক্ষক সংস্কৃত বিষয়ে দুবার ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছেন। বহু শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষটি এখন পেটের তাগিদে জয়পুরের রাস্তায় ভিক্ষা করে বেড়ান। এখন দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে তাঁর ভিক্ষা করে। এনডিটিভির খবরে বলা হয়, দুই মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে দিনেশের সংসার। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে বেশ আগে। জয়পুরে ছোট্ট একটা বাড়ি আর বাজারে একটা দোকান ছিল দিনেশের। এই দোকানের আয় আর স্কুলশিক্ষক হিসেবে প্রতি মাসে অবসরভাতা দিয়ে বেশ ভালোই চলার কথা তিনজনের সংসার। কিন্তু তা হয়নি। স্কুল থেকে ঝরে পড়া একমাত্র ছেলে সৌরভ মাদকাসক্ত। ২৫ বছর বয়সী ছেলের অত্যাচারে বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামেন তিনি। দিনেশের প্রতিবেশীরা জানান, বাবা ও ছোট বোনকে প্রায়ই নির্মমভাবে মারধর করেন মাদকাসক্ত ছেলে সৌরভ। মাদকসেবনের জন্য তিনি টাকাপয়সা কেড়ে নেন; তাঁদের কিছু খেতে দেন না। তাই বেঁচে থাকার জন্য আর কোনো উপায় না পেয়ে গত পাঁচ বছর ধরে ভিক্ষা করছেন দিনেশ। প্রতিবেশীরাও দিনেশের দিকে বাড়িয়েছেন সাহায্যের হাত। এ দিয়েই দিনশেষে মেয়ের মুখে খাবার তুলে দেন একসময়ের স্কুলশিক্ষক ও দুবার ডক্টরেট ডিগ্রি নেওয়া দিনেশ দিবেদি।
দিনেশের ছেলে সৌরভ জানান, ‘আমি জন্মগতভাবে মাদকাসক্ত নই। আমাকে মানুষই মাদকাসক্ত করেছে। যেসব মানুষ বাবার ও আমার সম্পত্তি ভোগদখল করতে চায়, তাঁরাই ষড়যন্ত্র করে আমাকে মাদকাসক্ত বানিয়েছে।’ এ ব্যাপারে দিনেশ বলেন, ‘আমাকে মারধর না করার জন্য তাঁর ) সৌরভ( কাছে বহুবার আকুতি-মিনতি করেছি। কিন্তু সে কোনো কথা শোনে না; আমাকে লাঠি দিয়ে পেটায়।’ দিনেশের এই দুরবস্থার কথা এখন জানাজানি হয়েছে। স্থানীয় সরকারের কানেও পৌঁছেছে এই সংবাদ। সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে দিনেশের জীবনকাহিনি। এবার হয়তো গাড়িঘোড়ায় চড়তে না পারুন, বাকি জীবনটা ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে অত্যাচারমুক্ত কাটাতে পারবেন দিনেশ।
সূত্রঃ প্রথম আলো, ২৮ নভেম্বর ২০১২ ইং
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।