সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: The Piper of Hamelin-সত্যিকারের হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালা

The Piper of Hamelin-সত্যিকারের হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালা



ছোট বেলায় আমরা বইয়ে পড়েছি এবং শুনেছি হ্যামেলিনের বাশিওয়ালার গল্প। এখন পর্যন্ত এ সম্পর্কে আমরা শুধু রূপকথা বলেই জানি। অথচ বাস্তবে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে জার্মানির প্রত্যন্ত এক অঞ্চলে। বাঁশির সুরে চোখের নিমিষেই শিশুগুলো হারিয়ে গিয়েছিল। আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি তাদের।


জার্মানির লোয়ার সাক্সনি প্রদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আঁকাবাঁকা ওয়েজার নদীর তীরে অবস্থিত ছবির মতো সুন্দর একটি শহর হ্যামেলিন। সেই শহরের ছোট্ট একটি রাস্তার নাম বুঙ্গে লোজেন স্ট্রিট বা নো ড্রাম স্ট্রিট। প্রায় সাতশবছর ধরে এ রাস্তায় সব ধরনের গান কিংবা বাদ্যযন্ত্র বাজানো নিষেধ। কারণ ১২৮৪ সালে এ রাস্তায় এক রহস্যময় বাঁশিওয়ালার পিছু নিয়ে ১৩০টি ছেলেমেয়ে হারিয়ে যায়-যাদের কোনো খোঁজখবর আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কোথায় গেল এসব শিশু, কেউ তো ফিরে আসেনি! ১২৮৪ সালের তারিখটি ছিল ২৬ জুন। সেদিন হ্যামেলিনে জন্মগ্রহণকারী ১৩০টি শিশু হরেক রঙের পোশাক পরা এক বংশীবাদকের পিছু নিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়-এমনটাই নো ড্রাম স্ট্রিটে একটি পুরাতন কাঠের ফলকে লেখা আছে। এতেই বোঝা যায়, ১২৮৪ সালের ২৬ জুন এ শহরে এক দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছিল। হ্যামেলিনের জাদুঘরে এ শহরটি সম্পর্কে অনেক অদ্ভুত এবং অসাধারণ কাহিনীর বিভিন্ন স্মারক পাওয়া যায়। শুধু সেই রহস্যময় বাঁশিওয়ালা সম্পর্কিত বই ও পাণ্ডুলিপি আছে সাড়ে তিনশর মতো। পঞ্চদশ শতকের একটি পাণ্ডুলিপি থেকে আন্দাজ করা যায়, একজন বংশীবাদক সত্যিই ছিলেন। পাণ্ডুলিপিতে ৩০ বছর বয়সী এক সুদর্শন তরুণের কথা বলা হয়েছে, যে একটি রুপালি বাঁশি বাজিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করত। যে শিশুই তার বাঁশি শুনেছে, সে-ই তার পিছু নিত। ফ্রাউ ভন লুডে নামের এক মহিলা নিজ চোখে এ ঘটনা দেখেছিলেন। শিশুরা নিখোঁজ হওয়ার পর তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

আরো জানা যায়, ১৩০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে হ্যামেলিনবাসী তাদের মার্কেট চার্চে একটি স্মারক জানালা স্থাপন করে। ওই জানালার গায়ে লেখা হয়, কোপেন অবধি সব ধরনের বিপদই শিশুরা অতিক্রম করেছে এবং তারপর তারা অদৃশ্য হয়ে যায়। আরেক লেখায় জানা যায়, এ জানালায় একদল শিশুর মধ্যে রঙিন পোশাকপরা একটি বয়সী লোকের ছবি ছিল। এ লেখায় বাঁশি বা কোনো ধরনের সংগীতযন্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। শোনা যায়, এ স্মারক জানালাটি ১৭০০ শতকে ধ্বংস হয়ে যায়। এসব লেখা থেকে মনের ভেতর উঁকি দিতে পারে, তাহলে তার সঙ্গে ইঁদুরের সম্পর্ক কী? এ প্রশ্নেরও উত্তর আছে। ১৯৫২ সালে আঁকা একটি জলরঙের ছবিতে। ছবিতে দেখা যায়, একেবারে সামনের দিকে একজন অপেক্ষাকৃত বয়স্ক লোককে বেশ তাগড়া স্বাস্থ্য মুখে গোঁফ, দেখতে হৃদয়বান বলেই মনে হয়। তার পরনে বহুবর্ণ পোশাক। ছবিতে তার পেছনে দুটি দৃশ্য আঁকা রয়েছে। একটিতে সে শিশুদের নিয়ে পাহাড়ের গায়ে এক বিরাট ফাটলে ঢুকছে। আরেকটিতে বংশীবাদককে ওয়েজার নদীতে একটি নৌকায় দেখা যাচ্ছে এবং তার বাঁশির সুরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইঁদুর পানিতে পানিতে লাফিয়ে পড়ছে। কোনো কোনো মধ্যযুগীয় প্রতীকে মানুষের আত্মাকে বোঝাতে ইঁদুর বোঝাত। তাহলে কি এই পেইন্টিং রূপক অর্থে অপহৃত ১৩০ জন শিশুর কথাই বোঝাতে চাইছে। মধ্যযুগে ইউরোপে ইঁদুরের আধিক্য ছিল সাধারণ ব্যাপার। তেমনি ছিল বিস্ময়কর ইঁদুর মারার গল্প। এমনও হতে পারে, সেই বাঁশিওয়ালা বাঁশির সুরে ইঁদুরদের সম্মোহিত করেছিল। আধুনিক বিজ্ঞান বলে এটি অসম্ভব নয়। উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ দিয়ে ইঁদুরকে সম্মোহিত করা সম্ভব।

হ্যামেলিনের জাদুঘরে একটি টিনের বাঁশি রক্ষিত আছে। এক ইংরেজ রেটক্যাচার এটি ব্যবহার করত। এর তীব্র এবং তীক্ষè আওয়াজের মাধ্যমে সে হাজার হাজার ইঁদুর তাড়িয়ে নিয়ে যেত ফাঁদের মাঝে। হয়তো এমনো হতে পারে, কোনো কোনো এক র‍্যাটক্যাচার হ্যামেলিনে এসেছিল। সে তার কাজ শেষ করার পরেও শহরবাসী তাকে প্রাপ্য অর্থ দেয়নি। ওই সময় শহরের কোনো শিশুও হারানো গেছে হয়তোবা-যার দায়ভার সবাই বাঁশিওয়ালার ওপর চাপিয়ে দেয়। মানুষের মুখে মুখে রটে যায় অন্য গল্প হয়ে। একজন গবেষক ধারণা পোষণ করেন, হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালা আসলে একজন আদমব্যাপারি ছিল যে, ১৩০ জন তরুণ এবং কিশোরকে সমৃদ্ধির দেশ স্লাভ ভূখণ্ডে যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করেছিল। হ্যামেলিনের অবসরপ্রাপ্ত একজন স্কুল মাস্টার ডোবারটিন, তিনি জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি কাটিয়েছেন হ্যামেলিনের নিখোঁজ শিশুদের নিয়ে পড়াশোনা করে। তার দৃঢ় ধারণা, হ্যামেলিনের সেই শিশুরা উত্তর-পূর্ব দিকে চলে যায় এবং একটি জাহাজে আরোহণ করে। জাহাজটি পোমেরানিয়ান উপকূলের কোপান নামক গ্রামের কাছে সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়। কোপান গ্রামটি বর্তমানে পোল্যান্ডের অন্তর্ভুক্ত। এ কোপানই হচ্ছে মধ্যযুগের বিভিন্ন ফলকে কথিত কোপেন পাহাড়। হ্যামেলিনের লোকরা দুটি নামকে গুলিয়ে ফেলে। বহু প্রাচীন নথিপত্র ঘেটে এসব তথ্য উদ্ধার করেছেন ডোবারটিন। এসব নথিপত্রে কাউন্ট নিকোলাস ভন স্পিয়েজেলবার্গ নামে এক জার্মান উপনিবেশ-স্থপতির বিবরণ পাওয়া যায়। হ্যামেলিনের আশপাশে এ লোকটির বিভিন্ন সম্পর্ক সূত্র ছিল। স্পিয়েজেল বার্গকে শেষ দেখা যায় বালটিক সাগর-তীরবর্তী জার্মান বন্দর স্টেটিনে ৮ জুলাই ১২৮৪ সালে-হ্যামেলিনের শিশুরা অদৃশ্য হওয়ার বারো দিন পর। অবাক ব্যাপার হলো, স্টেটিন বন্দরের সঙ্গে হ্যামেলিনের দূরত্ব ১২ দিনের। আর কোপান হচ্ছে বালটিক অঞ্চলে বসতি স্থাপনকারী জার্মানদের যাতায়াতের পথে ছোট একটি বন্দর। আরো জানা যায়, স্পিয়েজেল বার্গের সঙ্গে তার দুভাইও ছিল। তাদের কাউকেই হ্যামেলিনের ওই ঘটনার পরে কোথাও দেখা যায়নি। এমনকি কোপানেও তারা পৌঁছেননি অর্থা তারা মাঝপথে অদৃশ্য হয়েছেন। অনেকের ধারণা তারা জাহাজডুবিতে মারা গেছেন। তাদের সঙ্গে হ্যামেলিনের ১৩০ শিশুও পানিতে ডুবে মারা যায়।
সুরাইয়া নাজনীন



সূত্রঃ মানবকন্ঠ,  ২০ জানুয়ারী ২০১৩ ইং

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।