লিভার সিরোসিস। একটি মারাত্মক
ও অনিরাময়যোগ্য রোগ। এতে যকৃৎ বা লিভারের কোষকলা এমনভাবে ধ্বংস হয়ে যায় যে তা
সম্পূর্ণ বিকৃত ও অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে যকৃতের যেসব স্বাভাবিক কাজ আছে, যেমন বিপাক ক্রিয়া, পুষ্টি উপাদান
সঞ্চয়, ওষুধ ও নানা রাসায়নিকের শোষণ, রক্ত জমাট বাঁধার উপকরণ তৈরি ইত্যাদি কাজ ব্যাহত হয়। দেখা দেয়
নানাবিধ সমস্যা। ধীরে ধীরে এই রোগ মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় মানুষকে।
কেন হয়?
হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস
সংক্রমণ কারও কারও ক্ষেত্রে ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি আকার ধারণ করে সিরোসিসে পরিণত
হয়। বিশ্বজুড়ে এটাই প্রধানতম কারণ। তবে সব ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ সিরোসিসে পরিণত না-ও
হতে পারে। দেখা গেছে, ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হেপাটাইটিস
বি পজিটিভ রোগীর পাঁচ থেকে ২০ বছর পর লিভার সিরোসিস হতে পারে। তবে হেপাটাইটিস সি
ভাইরাসের ক্ষেত্রে এই হার অনেক বেশি। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের মদ্যপানের
অভ্যাস, যকৃতে চর্বি জমা থেকে জটিলতা, কিছু জিনগত সমস্যা, কিছু ইমিউন
সিস্টেমের জটিলতায়ও লিভার সিরোসিস হতে পারে।
চিকিৎসা নয়, প্রতিরোধ
চিকিৎসা নয়, প্রতিরোধ
মেডিসিন বিভাগ, ইউনাইটেড হাসপাতাল।lলিভার সিরোসিসে সেরে ওঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ। মাত্র ২৫ শতাংশ রোগী
পাঁচ বছরের বেশি সময় বেঁচে থাকার আশা করতে পারেন। সিরোসিস থেকে যকৃতের ক্যানসারেও রূপ
নিতে পারে। তাই রোগ হওয়ার আগে প্রতিরোধ করাই ভালো। হেপাটাইটিস বি ও সি সংক্রমণ
থেকে বাঁচতে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ, যেমন শিরায় নেশাদ্রব্য ব্যবহার, অনিরাপদ রক্ত গ্রহণ বা ঝুঁকিপূর্ণ যৌন সম্পর্ক এড়িয়ে চলুন।
যাঁরা হেপাটাইটিস বি নেগেটিভে আক্রান্ত, তাঁরা সংক্রমণ
এড়াতে টিকা দিয়ে নিতে পারেন। অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান এড়িয়ে চলুন। হেপাটাইটিসে
সংক্রমণ হলে ঝাড়ফুঁক-জাতীয় চিকিৎসা না করে দ্রুত বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা নিন।
প্রাথমিক লক্ষণ ধরা পড়তে দেরি হয়
প্রাথমিক লক্ষণ ধরা পড়তে দেরি হয়
হঠাৎ রক্তে লিভার এনজাইমের
অস্বাভাবিকতা বা আলট্রাসনোগ্রাফিতে যকৃতের আকার-আকৃতির পরিবর্তনের কারণ খুঁজতে
গিয়ে লক্ষণ ধরা পড়ে।
উপসর্গ
সাধারণত খাদ্যে অরুচি, ওজন হ্রাস, বমি ভাব বা বমি, বমি বা মলের সঙ্গে রক্তপাত, শরীরে পানি আসা ইত্যাদি হলো মূল উপসর্গ। পরে যকৃতের অকার্যকারিতার সঙ্গে কিডনির অকার্যকারিতা, রক্তবমি, রক্তে আমিষ ও লবণের অসামঞ্জস্য ইত্যাদি জটিলতা।
সূত্রঃ প্রথম
আলো, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৩
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।