এসএসসি পরীক্ষার তিন দিন আগে
শরীয়তপুরের এক ছাত্রীর হঠাৎ হাত-পা প্রথমে অবশ ও অনুভূতিহীন হয়ে গেল। এর কিছুক্ষণ
পর শুরু হলো খিঁচুনি। কয়েকবার শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে পড়লে মা-বাবা
স্থানীয় চিকিৎসককে ডাকলেন। একটা স্যালাইন ও কয়েকটি ইনজেকশন দেওয়ার পর জ্ঞান ফিরলেও
মেয়েটার কথা গেল বন্ধ হয়ে। পরীক্ষা দেওয়া তো হলোই না, মা-বাবা ঠিক করলেন স্নায়ুরোগের বড় চিকিৎসক দেখাবেন। এরই মধ্যে
প্রতিবেশীদের পরামর্শে শুরু হলো ঝাড়ফুঁক ও জিন চিকিৎসা। এক মাস পর বিধ্বস্ত ও
অসুস্থ মেয়েটাকে যখন ঢাকায় আনা হলো, তখন তার শরীরে
মারের কালশিটে দাগ পড়ে গেছে, অবিন্যস্ত চুল আর উদ্ভ্রান্ত
দৃষ্টি। চিকিৎসক ভালো করে দেখে ও পরীক্ষা করে বললেন, ওর শরীরে কোনো রোগ
নেই, রোগটা মনে বা চেতনায়, আর রোগটার নাম কনভারশন ডিসঅর্ডার।
‘কনভারশন ডিসঅর্ডার’ একটি মানসিক রোগ। কিন্তু উপসর্গগুলো শারীরিক। হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া, খিঁচুনির মতো ঝাঁকুনি, কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া, চোখে দেখতে না পাওয়া, কানে শুনতে না পাওয়া, কাঁপুনি, খাবার গিলতে না পারা, প্রস্রাব আটকে যাওয়া, যেকোনো রকমের হতে পারে এর উপসর্গ। দেখে মনে হতে পারে, রোগী জটিল কোনো স্নায়ুরোগে আক্রান্ত। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষায় শারীরিক কোনো সমস্যা ধরা পড়ে না। ফলে রোগী ও তার আত্মীয়স্বজন বিভ্রান্ত হন। তখন মনে হয়, এটি এতই জটিল একটি রোগ যে চিকিৎসক তা ধরতে পারছেন না। আবার অনেকে রোগী ভান বা ঢং করছে মনে করে তিরস্কার করেন। অনেকে আবার জিন-ভূতের আছর মনে করে ওঝা-কবিরাজের শরণাপন্ন হন।
কিন্তু মনে রাখুন, এ ধরনের সমস্যা জিন-ভূতের আছর যেমন নয়, তেমনি অভিনয় বা ভানও নয়। অবচেতন মনের জটিল মানসিক দ্বন্দ্বের প্রতিক্রিয়ায় অজান্তেই এসব উপসর্গ তৈরি হয়। ভালো করে ইতিহাস নিলে এর পেছনে পরীক্ষা, পারিবারিক অশান্তি, কর্মক্ষেত্রের সমস্যা, সামাজিক সমস্যা, চাওয়া-পাওয়ার অমিলজাতীয় মানসিক চাপ ও দ্বন্দ্বের খোঁজ মেলে।
ডা.
মুনতাসীর মারুফ
মানসিক রোগ
বিশেষজ্ঞ
জাতীয় মানসিক
স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।