সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: ‘যে কারণে আমার ইসরায়েলি পাসপোর্ট পোড়াতে যাচ্ছি’

‘যে কারণে আমার ইসরায়েলি পাসপোর্ট পোড়াতে যাচ্ছি’


ইসরায়েলি এমপি আলিয়াত শেকাদ: ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু হত্যায় সমর্থন দিচ্ছেন

তিনি বয়সে তরুণী; সুন্দরী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া কম্পিউটার প্রকৌশলী। বর্তমানে তিনি ইসরায়েলি পার্লামেন্টের সদস্যও। আজকে আমি যে আমার ইসরায়েলি পাসপোর্ট পুড়িয়ে ফেলতে যাচ্ছি, তার কারণও তিনি। কারণ, সুপ্রশস্ত চোখ সংবলিত ওই নিষ্পাপ মুখের আড়ালে মৃত্যুর দেবদূত ওত পেতে আছে। আলিয়াত শেকাদ ইসরায়েলি পার্লামেন্টে দেশটির অতি ডানপন্থী রাজনৈতিক দল জুইশ হোমের প্রতিনিধি। তার অর্থ, তিনি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পাশেই আছেন। হয়তো আপনি ভাবতে পারেন, এটা সম্ভব নয়, সে জন্যই এ কথাটা বলা।

গত সোমবার তিনি তাঁর ফেসবুক পাতায় লিখেছেন: ‘প্রতিটি সন্ত্রাসীর পেছনে রয়েছে ডজন ডজন নারী ও পুরুষ, যাদের ছাড়া তিনি সন্ত্রাসবাদে যুক্ত হতে পারেন না। তারা সবাই শত্রুপক্ষীয় যোদ্ধা...তাদের মধ্যে রয়েছে সেই সব নিহতের মায়েরাও, যারা তাদের সন্তানদের ফুল ও চুমু দিয়ে নরকে পাঠায়। তাদেরও তাদের সন্তানদের পরিণতি বরণ করা উচিত, এর চেয়ে ন্যায়বিচার আর কিছু নেই। বাড়িগুলোর মতো তাদেরও নিপাত যাওয়া উচিত। সেই বাড়িগুলো, যেখানে তারা সাপ লালন-পালন করেছে। তা না হলে আরও বাচ্চা সাপ সেখানে লালিত-পালিত হবে।

এর এক সপ্তাহ আগের কথা। সময়টা ছিল ১৭ বছর বয়সী মোহাম্মদ আবু খাদিরকে অপহরণের পর জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করার ঠিক আগে। শেকাদ লেখেন: ‘এটা সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়; চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধও নয়, এমনকি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধও নয়। বাস্তবতা হচ্ছে, এটা দুজন মানুষের মধ্যে যুদ্ধ। শত্রু কে? ফিলিস্তিনি জনগণ। কেন? তাদের জিজ্ঞাসা কর, তারাই এটা শুরু করেছে।’ সুতরাং কিশোর খাদির নির্মমভাবে নিহত হওয়ার আগেই তাকে শত্রু হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন শেকাদ। আর পরে কোনো অপরাধবোধ বা অনুশোচনা তো দূরের কথা, তিনি নির্দোষ নারী ও তাদের অনাগত সন্তানদের মৃত্যু কামনা করছেন।

আজকের ইসরায়েলকে আর কোনোমতেই ভুক্তভোগী বলা যাবে না। বরং, তারা বর্তমান সংকটের সংঘটক। হ্যাঁ, হামাস সদস্যরা ভয়ংকর হত্যাকারী। তবে বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, ইসরায়েলের ট্যাংক, বোমারু বিমান, কামান, পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আছে। অন্যদিকে সাধারণ গাজাবাসীর এক সপ্তাহ আগেও কিছু ছিল না; এখনো নেই। এমনকি হাসপাতাল ও স্কুলেও বোমা মারা হয়েছে।

শেকাদ যা চেয়েছিলেন, তা পেয়েছেন: গাজায় নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতি চারজনে একজনই শিশু। অন্যদিকে হামাসের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ইসরায়েলের একজনেরও প্রাণহানি হয়নি। আর গাজায় যখন বোমা-বৃষ্টি হচ্ছে, ইসরায়েলি তরুণ-তরুণীরা তখন টুইটারে তাদের স্বল্প-বসনের ‘সেলফি’ ছবি পোস্ট করতে ব্যস্ত; সঙ্গে রাজনৈতিক মতাদর্শ সংবলিত কথাবার্তা। একটি টুইটে লেখা, ‘সব আরব নিপাত যাও।’ আরেকটির ভাষা, ‘আরব, তোমরা সবাই পঙ্গু হয়ে তারপর বিরাট যন্ত্রণা নিয়ে মরবে।’ ‘দেব-প্রতিম এসব মুখ থেকে শয়তানের বাণী ওগরাতে দেখে আমি আমার ইসরায়েলি পাসপোর্ট এবং একটি ম্যাচ-বাক্স হাতে তুলে নিলাম।’ মিরা বার হিল্লেল: ইসরায়েলে জন্মগ্রহণকারী ফ্রিল্যান্স লেখক, ইন্ডিপেনডেন্ট থেকে নেওয়া।

সূত্রঃ প্রথম আলো, ১৩ জুলাই ২০১৪খ্রিঃ

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।