আফ্রিকার তাঞ্জানিয়ার প্রত্যন্ত
প্রান্তর | দিগন্ত জুড়ে শুয়ে আছে টকটকে লাল জমি | রং যেন রক্তকেও হার মানায় | জমি
থেকে প্রতিফলিত হয়ে আসা আলোতে ধাঁধিয়ে যায় চোখ। ভুল করে কাছে যায় পাখী এবং
প্রাণীরা | অনেক সময় অত কাছেও যেতে হয় না | তার আগেই জমে পাথর হয়ে যায়
তারা | কারণ ওটা কোনও জমি নয় | বরং হ্রদ | অতিরিক্ত
ব্যাকটেরিয়ার জন্য যার রং লাল | প্রচুর পরিমাণে সোডা আর লবণ থাকায়
তার পানি এতটাই কষ্টিক, সংস্পর্শে এলেই প্রস্তরীভূত হয়ে
যাচ্ছে প্রাণীরা | মৃত্যুপুরী এই হ্রদের নাম নাট্রোন |
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন হ্রদের পানিতে
চারপাশের পাহাড় থেকে এসে জমা হয় প্রচুর ব্যাকটেরিয়া | পাশাপাশি
আছে পানিতে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষার | যার মূল উৎস সোডিয়াম কার্বোনেট | পানির
Ph Balance ১০.৫| নাট্রোন হ্রদের ধার বরাবর হেঁটে
গিয়েছেন ফোটোগ্রাফার নিক ব্রান্ডট | তাঁর ক্যামেরায় ধরা পড়েছে
ফসিল হয়ে যাওয়া একের পর এক পাখি এবং অন্য জীবজন্তু | সোডিয়াম ব্যবহার করা হত প্রাচীন
মিশরে | মৃতদেহ মমি করার জন্য | সেই উপাদানের জন্য এখানেও
সংরক্ষিত হয়ে থাকছে প্রাণী-দেহ| বিকৃত হচ্ছে না চেহারা | শুধু
রক্ত মাংসের বদলে সে তখন পাথরের | অতিরিক্ত ক্ষারের প্রভাবে পুড়ে
যাচ্ছে কিছু প্রাণীর চোখ আর চামড়া | তবে কীভাবে এবং কেন
প্রাণীদের মৃত্যু হচ্ছে সে নিয়ে এখনও সম্যক ধারনা নেই বিজ্ঞানীদের |সেটা
এখনও রহস্যই |
কিন্তু শুধু মৃত্যুফাঁদ নয় | এই
হ্রদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে বাস্তুতন্ত্রে | কারণ এই হ্রদ এবং সংলগ্ন
এলাকা বিলুপ্তপ্রায় লেজার ফ্লেমিঙ্গোদের ব্রিডিং প্লেস | ওই
পানিতে থাকা ব্যাকটেরিয়াই এই পাখিদের প্রধান খাদ্য | তাছাড়া এই লোহিত হ্রদের
থাকা জীবাণু-বৈচিত্রও পৃথিবীতে বিরল | হ্রদের পানি তীব্র গরম | স্বাভাবিক
উষ্ণতা প্রায় ১৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট | বুকের মধ্যে রক্তবর্ণ বিষ-পানি
আর প্রাণীদের পাথর-দেহ নিয়ে শুয়ে আছে প্রকৃতির মেডুসা‚ লেক
নাট্রোন |
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।