কথা বললেন সারাহ
চুরম্যান, নিজেই কেঁদে
ফেললেন এবং আবার হাসলেন। ২৯ বছর বয়সে এই
কথা বলা, হাসি-কান্নার শব্দ
প্রথম নিজের কানে শুনলেন তিনি। আনন্দের সঙ্গে
বললেন, আমার হাসির শব্দ
এত জোরে হয়? এই নারী বধির হয়ে
জন্মেছিলেন। তার কানে বায়োনিক
ইয়ারস নামের যন্ত্র লাগানোর পর নিজের কণ্ঠ শোনার প্রথম দিনটি আসলো। যন্ত্রটি চালু করে দেওয়ার পর তার স্বামী ক্যামেরায়
ধারণ করলেন তার প্রথম অনুভূতি। এই ভিডিও ইউটিউবে ২০
মিলিয়নবার দেখা হয়েছে।
এতদিন ধরে কীভাবে কথা বলতেন এবং তা ভাষা কেমন ছিলো এবং তার কণ্ঠই বা কেমন তা জানতেন না সারাহ। এই প্রথম তিনি জানলেন যে, তার ভাষায় টেক্সাসের টান রয়েছে এবং তার স্বামী নাক ডেকে ঘুমান। গোটা বিশ্বে এমন বধির মানুষের সংখ্যা প্রচুর। জন হপকিন্স মেডিসিনের হিসেব অনুযায়ী, শুধু আমেরিকাতেই এর সংখ্যা ৩৬ মিলিয়নের বেশি। বংশগত কারণে বা অতিশব্দে বা বয়সের কারণেও মানুষের শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অথবা যেকোনো কারণ কানে যে শব্দ প্রবেশ করে সেখান থেকে মাথায় যাওয়ার গোটা পদ্ধতি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে মানুষ শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলে। তবে এই বায়োনিক যন্ত্রটি সার্জারির মাধ্যমে স্থাপন করা হয় যার দ্বারা শব্দের সংকেত চলে যায় মাথায়। এই বায়োনিক যন্ত্রটিকে বলা হয় কোচলেয়ার।
যন্ত্র যখন ‘অন’
যন্ত্রটি প্রথম
চালু করার সময় একেক জনের একেক অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে বলে জানান জন হপকিন্স লিসিনিং
সেন্টার এর প্রধান হাওয়ার্ড ফ্রান্সিস। বাচ্চারা
প্রথমে একটু ভয় পেয়ে যায়। একটু পরই তারা
হাসিতে আত্মহারা। চারপাশের যাবতীয়
শব্দ শুনতে পেয়ে তারা যারপর নাই আনন্দ পায়। বড়রা
জীবনের প্রথম শব্দ শুনতে পেয়েই পুলকিত হয়ে ওঠেন। তারা আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন। কারণ বহু বছর ধরে তারা কোনো শব্দই শুনতে পাননি। যাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শব্দ মস্তিষ্কে পৌঁছে
না তাদের জন্য বায়োনিক ইয়ারের প্রয়োজন পড়ে। আবার
যারা আগে শুনতেন কিন্তু হঠাৎ করেই বধির হয়ে গেছেন, তাদের
জন্যও এই যন্ত্রটি প্রযোজ্য।
নতুন এক অনুভূতি
তবে আমরা সুস্থ
মানুষরা যা শুনি তা তারা শুনতে পান না। তাদের
শ্রবণ অনেকটা রোবোটিক শব্দের মতো শোনায়। কোচলার
প্রতিস্থাপন করা মানে একটি ইলেকট্রিক যন্ত্র কানে লাগিয়ে দেওয়া। যন্ত্রের ভেতরের অংশ কানের বাইরে এবং পেছনের দিকে
থাকে। এর মাইক্রফোন শব্দ
গ্রহণ করে তা ব্যবহারকারীর জন্য সহনীয় করে প্রস্তুত করে। মস্তিষ্কের বাইরে থাকা একটি ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে এই শব্দ
পাঠিয়ে দেওয়া হয় কানের ভেতের প্রতিস্থাপিত একটি রিসিভারের কাছে। এটি শব্দকে ট্রান্সলেট করে গভীর কর্নদেশে পাঠিয়ে
দেয় যেখান থেকে তা মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়। এর
অর্থ হলো, কোচলার
প্রতিস্থাপান আসলে শব্দের মাত্রা তৈরি করে। ব্যবহারকারীরা
আসল শব্দ সরাসরি শুনতে পান না। এই যন্ত্রের
মাধ্যমে এমন শব্দ তৈরি হয় আসল শব্দের মতোই হয়, জানান
বায়োনিক যন্ত্র ব্যবহারকারী উইলিয়াম মেগার।
নতুন এক ভাষা
তবে যন্ত্রটি
প্রতিস্থাপন করা মানেই সঙ্গে সঙ্গে শব্দ শুনতে পারা নয়। এটা লম্বা একটা রাস্তার শুরু মাত্র। যন্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে এবং তবেই এর সুফল পাওয়া
যাবে বলে জানান তিনি। তাই জীবনে হঠাৎ
করেই নতুন নতুন এসব শব্দ ও ভাষা শোনা নতুনভাবে শেখার মতোই হবে। ব্যবহারকারীরা
বিভিন্নভাবে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। দৃশ্য দেখে যেমন শব্দ হবে বলে আগে মনে হতো, যন্ত্রটি লাগানোর পর আমি সেই সব শব্দ
শুনে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করি বলে জানান ৩৯ বছর বয়সী এক নারী। এখন আমি পানির শব্দ মিলিয়ে দেখি, বাতাসের
শব্দ মিলিয়ে দেখি আর আনন্দে কাঁদি। ৩৫ বছরের উইলিয়াম জানান, অনেকেই বলতেন যন্ত্রটি চালু করা হতে
পারে তোমার জীবনের সবচেয়ে বাজে সময়। আমার তাই মনে
হয়েছে। চালুর পর মনে
হয়েছে আমার মস্তিষ্কে কেউ ইলেকট্রিক শক দিয়েছে, আমি
কিছুই শুনতে পারছিলাম না। মূলত এই শক
পরিষ্কার শব্দ ছিলো। প্রায় এক মাস পর
উইলিয়াম সব শব্দ শুনতে পারছিলেন।
তবে একেক জনের একেক অনুভূতি হলেও সবাই একটি মতে একজোট। তা হলো, জীবনে এই যন্ত্রটি না নিলে বুঝতেই পারতাম না শব্দ কী এবং শব্দহীন জীবন আসলে কেমন?
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।