চোরাই
পথে প্রতিবছর শত শত কোটি মার্কিন ডলার যুক্তরাষ্ট্র থেকে মেক্সিকোতে পাচার হয়।
প্রাণান্তকর চেষ্টায়ও এটি বন্ধ করতে পারছে না সীমান্তরক্ষীরা। তবে এবার হয়তো
চোরাকারবারিদের দিন শেষ। গবেষকেরা ‘ঘ্রাণ’ নিতে
সক্ষম এমন একটি যন্ত্র তৈরি করছেন, যেটি ধরিয়ে দেবে
ডলার চোরাকারবারিদের।
লুকিয়ে রাখা ডলার খুঁজে বের করার যন্ত্রটি তৈরি
করছেন যুক্তরাষ্ট্রের একদল রসায়নবিদ। তাঁরা প্রথমবারের মতো মার্কিন কাগুজে
নোটগুলোর অনন্য ঘ্রাণ শনাক্ত করতে পেরেছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সম্প্রতি
আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির এক সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
গবেষণার সঙ্গে যুক্ত কেডব্লিউজি ইঞ্জিনিয়ারিং নামক প্রতিষ্ঠানের গবেষক জোসেফ সেটলার বলেন, ‘এর আগে কেউ কাগুজে মুদ্রার গন্ধ খোঁজার চেষ্টা করেনি। আমরা দেখলাম, মার্কিন ডলার থেকে বিভিন্ন ধরনের নিয়ত পরিবর্তনশীল জৈব উপাদান নির্গত হয়। সেগুলো থেকে একধরনের ‘ফিঙ্গার প্রিন্ট’ তৈরি হয়, যা আমরা এক মিনিটেরও কম সময়ে শনাক্ত করতে পারি।’ গবেষক সেটলারের প্রতিষ্ঠানটি ডলার শনাক্ত করতে হস্তচালিত যে যন্ত্রটি তৈরি করছেন, সেটি বাল্ক কারেন্সি ডিটেকশন সিস্টেম (বিসিডিসিএস) নামে পরিচিত। মার্কিন কর্মকর্তারা গত অর্থবছরে মেক্সিকোয় পাচারের চেষ্টাকালে ১০ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার উদ্ধার করেন। এর বেশির ভাগই ছিল অবৈধভাবে মাদক চোরাচালানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ। কিন্তু সীমান্ত দিয়ে প্রতিবছর পাচার হওয়া তিন হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারের তুলনায় সেটা একেবারেই সামান্য। এসব অর্থ পরিধেয় বস্ত্র, ব্যাগ এবং যানবাহনের ভেতরে লুকিয়ে পাচার করা হয়ে থাকে।
বর্তমানে সীমান্তে প্রশিক্ষিত কুকুরের সাহায্য নিয়ে সীমান্তরক্ষীরা ডলার পাচার ঠেকানোর চেষ্টা করে থাকে। তবে এটি একই সঙ্গে ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। বিমানবন্দরের স্ক্যানারগুলো কিছু অর্থ উদ্ধারে সফলতা পেলেও সেগুলো আকারে বড় হওয়ায় ব্যস্ততম সীমান্ত পোস্টগুলোর জন্য অবাস্তব একটি ব্যবস্থা। তাই অপেক্ষাকৃত যুতসই একটি সমাধান বের করতে বিজ্ঞানীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তর। তার প্রেক্ষাপটেই নতুন যন্ত্রটি তৈরির ঘোষণা এল। এ যন্ত্রকে তিনটি চ্যালেঞ্জে পাস করতে হবে। প্রথমত, অনেক গন্ধের মধ্য থেকে ডলারের গন্ধ আলাদা করা। গবেষকদের মতে, বিভিন্ন তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় গাড়ির ধোঁয়া, সুগন্ধী প্রসাধন, খাবারসহ হাজারো গন্ধের মধ্য থেকে ডলারের গন্ধ বের করতে হয়। দ্বিতীয়ত, স্বল্প সময়ের মধ্যেই তল্লাশিকাজ চালাতে হবে। কারণ, সীমান্তে কোনো ব্যক্তি বা যানবাহন পরীক্ষা করতে খুবই কম সময় পাওয়া যায়। আবার কোনো নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠিয়ে খতিয়ে দেখার মতো কোনো সময় নেই। তৃতীয়ত, যন্ত্রটিকে হতে হবে সহজে বনহযোগ্য। এটি এমন আকৃতির হতে হবে, যেন সীমান্তরক্ষীরা খুব সহজেই সেটি হাতে নিয়ে সারিতে দাঁড়ানো মানুষের কাছে গিয়ে পরীক্ষা চালাতে পারে। আবার সহজেই যাতে কোনো যানবাহনের ভেতরে নিয়ে যাওয়া যায়। এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক এগোলেও কবে নাগাদ যন্ত্রটি সীমান্তরক্ষীদের হাতে পৌঁছাবে, তা এখনো জানানো হয়নি। সূত্র: বিবিসি।
সূত্রঃ প্রথমআলো, ১৯ আগস্ট ২০১৪
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।