সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: মধু

মধু


মধু হল এক প্রকারের মিষ্টি ও ঘন তরল পদার্থ, যা মৌমাছি ও অন্যান্য পতঙ্গ ফুলের নির্যাস হতে তৈরি করেএবং মৌচাকে সংরক্ষণ করে। এটি উচ্চ ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি ভেষজ তরল ; এটি সুপেয়। বিভিন্ন খাদ্য প্রস্তুতিতে এর ব্যবহারে চিনির চেয়ে এর অনেক সুবিধা রয়েছে। এর বিশিষ্ট গন্ধের জন্য অনেকে চিনির চাইতে মধুকেই পছন্দ করে থাকেন। বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধু স্বাদ, রং, হালকা সুগন্ধ এবং ঔষধিগুণাবলীর জন্য প্রসিদ্ধ। সুন্দরবনের বেশীরভাগ মধু কেওড়া গাছের ফুল থেকে উৎপন্ন। সুন্দরবনের মাওয়ালী সম্প্রদায়ের লোকেরা মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে এবং তা বিক্রয় করে জীবন নির্বাহ করে।


ভৌত বৈশিষ্ট্যঃ
বাংলাদেশের জাতীয় মধু বোর্ডের সংজ্ঞা অনুযায়ী "মধু হল একটি বিশুদ্ধ পদার্থ যাতে পানি বা অন্য কোন মিষ্টকারক পদার্থ মিশ্রিত করা হয় নাই।"[১] মধু চিনির চাইতে অনেক গুণ মিষ্টি। তরল মধু নষ্ট হয় না, কারণ এতে চিনির উচ্চ ঘনত্বের কারণে প্লাজমোলাইসিস প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। প্রাকৃতিক বায়ুবাহিত ইস্টমধুতে সক্রিয় হতে পারে না, কারণ মধুতে পানির পরিমাণ খুব অল্প। প্রাকৃতিক, অপ্রক্রিয়াজাত মধুতে মাত্র ১৪% হতে ১৮% আর্দ্রর্তা থাকে। আর্দ্রর্তার মাত্রা ১৮% এর নিচে যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ মধুতে কোন জীবাণু বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। পাস্তুরাইয্‌ড মধুতে মধুর প্রাকৃতিক ঔষধি গুণাবলী হ্রাস পায়।


মানুকা হানিঃ 
নিউজিল্যাণ্ডের মানুকা হানি বাজারে প্রাপ্য সকল মধুর চেযে বেশী চেযে ঔষধিগুণ সম্পন্ন গণ্য করা হয়। মানুকা নামীয় একপ্রকার ঝোপ জাতীয় উদ্ভিদের ফুল থেকে উৎপন্ন মধু "মানুকা হানি" নামে পরিচিত।[২]

ব্যবহারঃ
প্রাচীন গ্রিসের খেলোয়াড়েরা মধু খেযে মাঠে নামতো ; কারণ মধুতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফ্রুক্টোজ  গ্লুকোজ যা যকৃতে গ্রাইকোজেনের রিজার্ভ গড়ে তোলে। রাতে ঘুমানোর আগে মধু খেলে মস্তিষ্কের ক্রিয়াক্ষমতা ভালো থাকে। নিয়মিত মধু পানে রোগ-বালাই হ্রাস পায় কেননা মধু মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ঠাণ্ডায় মধু ভালো কাজ করে ; পেনসিলভেনিয়া স্টেট কলেজের পরীক্ষায় দেখা গেছে বাজারে যত ঔষধ পাওয়া যায় তার চেয়ে অনেক বেশী কার্যকর এক চামচ মধু। মধুর ভাইরাস প্রতিরোধী ক্ষমতা উচ্চ। মধু হজমে সাহায্য করে। পেটরোগা মানুষদের জন্য মধু বিশেষ উপকারী।[৩] প্রাচীন কাল তেকে গ্রিস ও মিশরে ক্ষত সারাইয়ে মধু ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২০০৭-এ সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরীক্ষায় দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষত ও জখমের উপশমে মধু ডাক্তারী ড্রেসিং-এর চেয়েও বেশী কার্যকর। অগ্নিদগ্ধ ত্বকের জন্যও মধু খুব উপকারী।[৪]


শীতে মধু খাবেন কেন?

সর্দি-কাশি সব সময়ই হতে পারে, তবে শীতকালে বেশি হয়। এ সময় গলা খুসখুস, ব্যথাসহ আরও অনেক রকম অসুখ-বিসুখে মধু খেলে উপকার পাওয়া যায়। শত শত বছর আগে থেকেই এই প্রাকৃতিক ওষুধের গুণ মানুষ জানে। প্রাচীন গ্রিক ও মিসরীয়রা ওষুধ হিসেবে মধু খেত। ভারতের আয়ুর্বেদ ও চীনের প্রাচীন চিকিত্সাশাস্ত্রে মধুর ব্যবহার দেখা যায়। মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি, অ্যামিনো অ্যাসিড ও খনিজ পদার্থ। এটা ঘন বলে গলা ফোলা ও ব্যথায় আরামদায়ক একটি প্রলেপের মতো কাজ করে। মধু ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, পেটের আলসার ভালো করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। জেনে নিন মধুর কিছু ব্যবহার:

১. সামান্য সর্দি-কাশিতে আমরা সাধারণত তুলসীপাতার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খাই। এতে উপকার পাওয়া যায়। কুসুম গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খেলে কাশির প্রকোপ কমে। তবে এক বছরের কম বয়সী ছোট বাচ্চাদের মধু খাওয়াবেন না। কারণ, মধুতে ক্লস্ট্রিডিয়াম বটুলিনাম নামের রেণু থাকে। বয়স্কদের অন্ত্রে এগুলো বংশবিস্তার করতে পারে না, কিন্তু খুব ছোট বাচ্চাদের পেটে বেড়ে উঠে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। 

২. শরীরের কোথাও সামান্য কাটাছেঁড়া থাকলে মধুর প্রলেপ দেওয়া যায়। মধুতে উঁচু মাত্রার জীবাণুনাশক উপাদান থাকায় সহজে সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হয়। মৌমাছি ফুল থেকে যে মধু সংগ্রহ করে তাতে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পানি থাকে। ওরা নিজেরা কিছু রস খেয়ে বাকিটা মৌচাকে জমা করে। সূর্যতাপে পরিশোধিত হয়ে মধু বিভিন্ন গুণ অর্জন করে। এর জলীয় অংশও অনেক কমে যায়। ফলে কাটাছেঁড়া স্থানে মধুর প্রলেপ দিলে প্রথমে সেখান থেকে জলীয় অংশ শুষে নেয় ও বাইরের জলীয় পদার্থ ঢুকতে দেয় না। জলীয় অংশ না থাকলে ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণু বাঁচতে পারে না। এভাবে মধু ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। 

৩. গ্যাস্ট্রিক-আলসারে মধু উপকারে আসে। ১০০ গ্রাম কুসুম গরম পানিতে এক টেবিল-চামচ মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

৪. রাতে শোয়ার ঘণ্টা দুয়েক আগে কুসুম গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খেলে ভালো ঘুম হয়।

৫. তবে একটানা বেশি দিন মধু খেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। মাঝে বিরতি দিয়ে বছরের বিভিন্ন সময় মধু খাওয়া যেতে পারে।

সূত্র: উইকিপিডিয়া এবং রিডার্স ডাইজেস্ট প্রকাশিত বই হোম রেমেডি



সূত্রঃ প্রথম আলো, ০০:৩৮, ডিসেম্বর ২০, ২০১৪

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।