সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ


হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ (জন্ম ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০১৪ জুলাই ২০১৯) বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান ও রাজনীতিবিদ যিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার দেশ পরিচালনাকে অনেকেই সামরিক একনায়তন্ত্রের সাথে তুলনা করেন। তিনি জাতীয় পার্টি নামক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন যা পরবর্তীতে বেশ কিছু উপদলে বিভক্ত হয়। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসন হতে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।


১৯৮৩ সালে নির্বাচিত সরকারের অধীনে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালনকালে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং সামরিক শাসন জারীর মাধ্যমে দেশ শাসন করেন। দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুন:প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ঘোষণা করে তিনি ১৯৮৬ সালে সংসদীয় সাধারণ নির্বাচন দেন। এই নির্বাচনে তিনি স্বপ্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির ভোটপ্রার্থী হিসাবে অংশ গ্রহণ করেন এবং পরে পাঁছ বছরের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গণবিক্ষোভের চাপে এবং সেনাবাহিনীর সমর্থনের অভাবে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।


বাংলাদেশের দশম রাষ্ট্রপতি
কাজের মেয়াদ
১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ – ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০
প্রধানমন্ত্রী
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা
কাজের মেয়াদ
৯ জানুয়ারি, ২০১৯ – ১৪ জুলাই, ২০১৯
পূর্বসূরী
কাজের মেয়াদ
২৯ ডিসেম্বর, ১৯৭৮ – ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৮৫[১]
রাষ্ট্রপতি
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম
১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০ (বয়স ৮৯)
দিনহাটাব্রিটিশ ভারত
(
বর্তমানে ভারত)
মৃত্যু
১৪ জুলাই ২০১৯
রাজনৈতিক দল
দাম্পত্য সঙ্গী
·         রওশন এরশাদ
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্য
শাখা
কাজের মেয়াদ
 পাকিস্তান ১৯৫২১৯৭১
 বাংলাদেশ ১৯৭৩১৯৮৫
পদ

  

প্রাথমিক জীবন ও সামরিক পেশাজীবন
১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলার দিনহাটা শহরে জন্মগ্রহণ করেন এরশাদ। পরে তাঁর পরিবার রংপুরে চলে আসে। তিনি রংপুর জেলায় শিক্ষাগ্রহণ করেন এবং ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫১ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অফিসার্স ট্রেনিং স্কুলে (কোহাটে অবস্থিত) যোগ দেন এবং ১৯৫২ সালে কমিশনপ্রাপ্ত হন। ১৯৬০ -১৯৬২ সালে তিনি চট্টগ্রাম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কেন্দ্রে অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৭ সালে তিনি কোয়েটার স্টাফ কলেজ থেকে স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি শিয়ালকোটে ৫৪ ব্রিগেডের মেজর ছিলেন। ১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি লাভের পর ১৯৬৯ -১৯৭০ সালে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর অধিনায়ক ও ১৯৭১ -১৯৭২ সালে ৭ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় এরশাদ ছুটিতে রংপুর ছিলেন। কিন্তু, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে তিনি পাকিস্তান চলে যান। পাকিস্তান থেকে আটকে পড়া বাঙালিরা যখন ১৯৭৩ সালে দেশে ফিরে আসে তখন তিনিও প্রত্যাবর্তন করেন। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর সময় আগ্রা ক্যান্টনমেন্টে জাতীয় প্রতিরক্ষা কোর্সে অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে এরশাদ
পাকিস্তান থেকে দেশে ফেরার পর ১৯৭৩ সালে তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১২ ডিসেম্বর ১৯৭৩ সালে তিনি কর্নেল ও ১৯৭৫ সালের জুন মাসে ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি পান। ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট ভারতে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় তিনি মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান ও উপসেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান। ১৫ অগাস্ট সামরিক অভ্যুত্থানের পর এরশাদ বাংলাদেশের দিল্লি মিশনের মাধ্যমে দেশে ফেরার আকাঙ্ক্ষা জানিয়ে বার্তা পাঠান। ১৯৭৮ সালে তাকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং এরশাদ একই বছরের ডিসেম্বরে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব বুঝে নেন।

সামরিক অভ্যুত্থান ও রাষ্ট্রপতিত্ব এবং রাজনৈতিক জীবন শুরু
৩০ মে ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হবার পর, এরশাদের রাজনৈতিক অভিলাষ প্রকাশ হয়ে পড়ে। ২৪ মার্চ ১৯৮২ সালে এরশাদ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সাল নাগাদ তিনি প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন করেন। ঐ দিন তিনি দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি বিচারপতি এ.এফ.এম আহসানুদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে নিজের অধিকারে নেন। এরশাদ দেশে উপজেলা পদ্ধতি চালু করেন এবং ১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই দলের মনোনয়ন নিয়ে ১৯৮৬ সালে পাঁচ বছরের জন্য দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জামায়াত এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে যদিও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এই নির্বাচন বয়কট করে। সাধারণ নির্বাচনে তার দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে। বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে রাষ্ট্রপতি ৭ ডিসেম্বর ১৯৮৭ সালে এই সংসদ বাতিল করেন। ১৯৮৮ সালের সাধারণ নির্বাচন সকল দল বয়কট করে। এরশাদের স্বৈরাচারের বিরূদ্ধে দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে সকল বিরোধী দল সম্মিলিতভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে।

গ্রেফতার
এরশাদের অপশাসনের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর অবিরাম আন্দোলন চলতে থাকে এবং প্রবল গণঅভ্যুত্থানের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ১৯৯১ সালে জেনারেল এরশাদ গ্রেপ্তার হন এবং তাঁকে কারাবন্দি করে রাখা হয়। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে জেলে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় এরশাদ রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। বিএনপি সরকার তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে এবং কোনো কোনোটিতে দোষী প্রমাণিত হয়ে তিনি কারাদন্ডে দন্ডিত হন। ১৯৯৬-এর সাধারণ নির্বাচনেও এরশাদ সংসদে পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন। ছয় বছর জেলে থাকার পর ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি তিনি জামিনে মুক্ত হন। তবে আদালতের রায়ে দন্ডিত হওয়ার কারণে সংসদে তাঁর আসন বাতিল হয়ে যায়।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ১৯৮৬
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন , ১৯৮৬ (অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ ১৫ অক্টোবর,১৯৮৬) জয়লাভ করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এ নির্বাচনে ১৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। বাছাই এ কোন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাদ না পড়ায় বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬ জন। ৪জন প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ১২ জন ছিল।

১৯৮৬ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ১২জন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেনঃ ১। জনাব অলিউল ইসলাম চৌধুরী (সুক্কু মিয়া) ২। আলহাজ্ব মাওলানা খায়রুল ইসলাম যশোরী ৩। আলহাজ্ব মেজর (অব) আফসার উদ্দিন ৪। জনাব মুহাম্মদ আনছার আলী ৫। জনাব মওলানা মোহাম্মদুল্লাহ (হাফেজ্জী হুজুর) ৬। জনাব মোহাম্মদ খলিলুর রহমান মজুমদার ৭। জনাব মোঃ আব্দুস সামাদ ৮। জনাব মোঃ জহির খান ৯। লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবঃ) সৈয়দ ফারুক রহমান ১০। সৈয়দ মুনিরুল হুদা চৌধুরী ১১। স্কোঃ লিঃ (অবঃ) মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী ১২। জনাব হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ

৯১-পরবর্তী রাজনৈতিক পেশাজীবন
ক্ষমতা হারানোর পর এরশাদ গ্রেফতার হন এবং ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না-আসা পর্যন্ত কারারূদ্ধ থাকেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি কারাগার থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। বি.এন.পি সরকার তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে। তার মধ্যে কয়েকটিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং সাজাপ্রাপ্ত হন। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও তিনি পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। ছয় বছর আবরুদ্ধ থাকার পর ৯ জানুয়ারি ১৯৯৭ সালে তিনি জামিনে মুক্তি পান। তার প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি ২০০০ সালে তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে, যার মধ্যে মূল ধারার তিনি চেয়ারম্যান। ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৪টি আসনে জয়ী হয়। এর পর তিনি ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দল ২৭টি আসনে বিজয়ী হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে মোট ১৪৭টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়। বিএনপির ও এর নেতৃত্বাধীন জোট এই নির্বাচন বর্জন করে। ১৫৩টি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায় আওয়ামী লীগ ও এর শরিক দলগুলো। এ নির্বাচনে তার দল সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং তার স্ত্রী রওশন এরশাদ প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা হন। নির্বাচনে ৩৪টি আসন পেয়ে জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম অংশীদার জাতীয় পার্টি ২২টি আসনে জয় পায়।

শাসনকালীন সাফল্য
থানা পর্যায়ে দেশব্যাপী উপজেলা স্থানীয় সরকার পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্যই মুখ্যত এরশাদ আমল (১৯৮২-৯০) স্মরণীয় হয়ে আছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকেরা মূলত আইনশৃ্ঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশি কেন্দ্র হিসেবে থানাগুলোকে সৃষ্টি করে। ইউনিয়ন পরিষদগুলোর  উন্নয়ন কার্যক্রম সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানের জন্য ১৯৫৯ সালে প্রথমবারের মতো থানা পর্যায়ে একটি স্থানীয় সরকার ইউনিট গঠন করা হয়। প্রেসিডেন্ট এরশাদ স্থানীয় তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের অনুকূলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কার্যকরভাবে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে প্রশাসন ও পরিকল্পনায় তাদের অংশগ্রহণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তাই উপজেলাগুলোকে উন্নয়ন প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে উন্নীত করার মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকরণের এই ধারণাকে বাস্তব রূপ দেওয়া হয়। এই উদ্দেশ্য সামনে রেখে একটি আইনি কাঠামো দাঁড় করাতে ১৯৮২ সালে স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ পুনর্গঠন) অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এরপর ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০টি ধাপে ৪৬০টি থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়।
এ আইনের আওতায় উপজেলা পরিষদগুলোকে একটি কর্পোরেট সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস চালানো হয়, যাতে প্রতিনিধিত্বমূলক সদস্য ছাড়াও পেশাজীবী ও প্রায়োগিক কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত ছিল। চেয়ারম্যানরা ছিলেন পরিষদের প্রধান নির্বাহী এবং তাঁরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতেন। এর বাইরে উপজেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা, উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির সভাপতি, তিনজন মহিলা সদস্য, একজন মনোনীত সদস্য এবং সরকারি সদস্যবৃন্দ। উপজেলা পরিষদসমূহের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যানবৃন্দ ১৯৮৫ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর শাসনকালে জেলা পরিষদসমূহ সক্রিয় ও কার্যকর করার জন্যও এরশাদকে সাধুবাদ দেওয়া হয়। এরশাদের আরেকটি বড় সাফল্য ছিল দক্ষিণ এশীয় সহযোগীতা সংস্থা (সার্ক) গঠনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উদ্যোগকে সামনে এগিয়ে নেওয়া, ভারতীয় উপমহাদেশের সাতটি রাষ্ট্র যার সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। ১৯৭৯ সাল থেকে চার বছরের প্রস্ত্ততিমূলক কাজ শেষে ১৯৮৩ সালের আগস্ট মাসে অনুষ্ঠিত দক্ষিন এশীয় দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে এ লক্ষ্যে একটি সমন্বিত কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। এর দুই বছর পর ১৯৮৫ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট এরশাদের আমন্ত্রণে এ অঞ্চলের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানেরা ঢাকায় একটি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। এই প্রথম শীর্ষ সম্মেলনেই দক্ষিণ এশিয়ার নেতারা সার্ক গঠনের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যাতে অন্তর্ভুক্ত হয় ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ।
প্রেসিডেন্ট এরশাদ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্পের বিরাষ্ট্রীয়করণ এবং দেশে ব্যক্তিখাতের বিকাশে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। এর অন্তর্ভুক্ত ছিল সরকারি মালিকানাধীন উত্তরা, পুবালী ও রূপালী ব্যাংকের বিরাষ্ট্রীয়করণ। এসময়ে দেশে প্রথমবারের মতো বেশ কয়েকটি বেসরকারি বাণ্যিজ্যিক ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিকে কার্যক্রম শুরুর অনুমতি প্রদান করা হয়। দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন ও সংস্কারেও এরশাদ সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়। মহকুমাগুলোকে জেলায় উন্নীত করার মাধ্যমে দেশে জেলার সংখ্যা ৬৪ করা হয়। এগুলোর অধীনে আবার ন্যস্ত করা হয় ৪৬০টি উপজেলাকে। কেন্দ্রীয় ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের উদ্দেশ্যে এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৮ এপ্রিল একটি প্রশাসনিক পুনর্গঠন ও সংস্কার কমিশন গঠন করেন, যার সুপারিশ অনুযায়ী জনপ্রশাসনকে নতুন করে সাজানো হয়।
একটি সমন্বিত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসকে প্রায়োগিক পার্থক্যের ভিত্তিতে এরশাদ সরকার ৩০টি ক্যাডারে বিভক্ত করে; সিভিল সার্ভিস ক্যাডারসমূহের গঠন ও দায়িত্ব অনুযায়ী তাদের আনুষ্ঠানিক আকার দেওয়ার লক্ষে ক্যাডার কম্পোজিশন ও নিয়োগ বিধি জারি করা হয়। পাশাপাশি এদের একটি সুশৃঙ্খল কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য প্রণীত হয় সরকারি কর্মচারি আচরণ বিধি এবং শৃঙ্খলা ও আপীল বিধি। নারীসমাজের আর্থ-সামাজিক স্বার্থ সমুন্নত রাখতে এরশাদ সরকার ১৯৮৪ সালে একটি পৃথক মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর স্থাপন করে। এরশাদ আমলের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল পুলিশসহ বিভিন্ন সিভিল পদে মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যক সেনা কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগ। তবে প্রশাসনের আকার কমাতে তিনি বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় দপ্তর বিলোপ করেন এবং অনেক দপ্তর একীভূত করেন। ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট বেঞ্চ বসিয়ে এরশাদ উচ্চতর আদালত বিকেন্দ্রীকরণেরও প্রয়াস চালান, কিন্তু বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের রায়ে পরে তা খারিজ হয়ে যায়। 
এরশাদ সরকার দেশে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ভূমি সংস্কারেরও প্রয়াস চালান। এ লক্ষ্যে ১৯৮২ সালে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ১৯৮৩ সালের জানুয়ারিতে তার প্রতিবেদন পেশ করে এবং সরকার এই প্রতিবেদনের কয়েকটি সুপারিশ অনুমোদন করে। ১৯৮৩ সালের আগস্ট মাসে ভূমি সংস্কারের জন্য একটি জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে আলোচনা ও প্রদত্ত পরামর্শের ভিত্তিতে ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ ১৯৮৪, ভূমি সংস্কার বিধি ১৯৮৪ এবং কৃষি শ্রম (ন্যূনতম) মজুরি অধ্যাদেশ ১৯৮৪ জারি করা হয়। ভূমি সংস্কার সংক্রান্ত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে ১৯৮৭ সালের মার্চে একটি ক্যাম্পেইন হাতে নেওয়া হয়। এর লক্ষ্য ছিল: ভূমিহীন, প্রায়-ভূমিহীন ও প্রান্তিক চাষীদের মধ্যে খাসজমি বিতরণ; ‘অপারেশন ঠিকানাকর্মসূচির আওতায় সরকারি জমিতে ভূমিহীনদের জন্য গুচ্ছ-গ্রাম প্রতিষ্ঠা; বর্গাচাষীদের আইনগত অধিকার প্রদান; অধিকতর উৎপাদনের জন্য পাহাড়ি জমি, মৎস্য ও চিংড়ি চাষের জমির সর্বোত্তম ব্যবহার; পল্লী অঞ্চলের আয় বন্টনে অধিকতর সমতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উচ্চতর কৃষি উৎপাদনে অবদান রাখা; গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চলে অভিবাসন হ্রাসে সহায়তা করা। তবে তাঁর অন্য অনেক উদ্যোগের মতোই ভূমি সংস্কারের উদ্যোগও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় মূলত আমলাতন্ত্রের অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে।

১৯৮২ সালে ঘোষিত নতুন শিল্পনীতিকে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগের জন্য আরো উদার করে এরশাদ ১৯৮৬ সালে আরেকটি শিল্পনীতি ঘোষণা করেন। এরশাদের আমলে শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধির হার ছিল অত্যন্ত লক্ষণীয়, বিশেষত তৈরি পোশাক খাতসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে। তাঁর অর্থনৈতিক কর্মসূচির মূল ভিত্তি ছিল সকল ক্ষেত্রে ব্যক্তিখাতের নেতৃত্বে প্রবৃদ্ধি অর্জন। ব্যক্তিখাতকে শিল্প-বিনিয়োগে সহায়তা দিতে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে আরো বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিতে এরশাদ ১৯৮৯ সালে একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে বিনিয়োগ বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের রাষ্ট্রপতিকে বোর্ডের সভাপতি করা হয়, আর এর দৈনন্দিন কার্য-নির্বাহের জন্য গঠন করা হয় একটি নির্বাহী পরিষদ। জনগণের কাছ থেকে কর (সারচার্জ) আদায় করে আর বিশ্ব ব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক সহ দাতাদের কাছ থেকে তহবিল জোগাড়ের লক্ষ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে এরশাদই প্রথম যমুনা সেতু নির্মাণের বাস্তব পদক্ষেপ নেন। তাঁর অন্যান্য সৃজনশীল প্রয়াসের মধ্যে ছিল পথশিশুদের প্রয়োজন মেটাতে পথকলি ট্রাস্টগঠন এবং দেশের পরিবেশ বিষয়ক একটি সমন্বিত কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন। বিশেষত উপজেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকার কারণে এরশাদের অনুসারীরা তাঁকে পল্লীবন্ধুখেতাবে ভূষিত করেছেন।

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম
বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক মুসলিম, অধিকাংশ নাগরিকের ধর্মীয় মূল্যবোধের বিষয়টি বিবেচনা করে ১৯৮৮ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষনা করেছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার মাধ্যমে এরশাদ বাংলাদেশকে এক নতুন পরিচয় দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বৃহত্তর মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে নতুনভাবে পরিচয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা দেয়াটা এক কথায় খুব সহজ ছিলো না। স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বপ্রথম সংবিধান রচনা করা হয় ১৯৭২ সালে। তখন সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের কথা উল্লেখ ছিল না। ১৯৮৮ সালের ৫ জুন চতুর্থ জাতীয় সংসদে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী পাস হয়। সেই সংশোধনীতে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রথম উদ্যোগ এরশাদই নিয়েছিলেন। ওই সংশোধনীতে সংবিধানের ২ নম্বর অনুচ্ছেদের পরেই ২(ক) নম্বর অনুচ্ছেদ যোগ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে। বাংলাদেশে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খিস্টানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন, যে কোনো সরকারের উচিত সব সম্প্রদায়ের মাঝে সম্প্রীতি বজায় রেখে সবার ন্যায্য হিস্যা মোতাবেক সেবা প্রদান করা। সে লক্ষ্যে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করলেও সঙ্গে সঙ্গে অন্য ধর্মাবলম্বীদের স্বার্থের বিষয়টিও জেনারেল এরশাদ সংবিধানে যোগ করেছিলেন। ১৯৮৮ সালে প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রঘোষণা করেন। তার এ ঘোষণায় মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের মানুষের কাছে তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। 
১৯৮৮ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার পর ওই বছরই এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে কয়েকজন নাগরিক রিট আবেদন করেন। দীর্ঘদিন মামলাটি আদালতে বিভিন্ন উত্তাপ ছড়ালেও ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ মহামান্য আদালত রিটটি খারিজ করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখেন। ঐতিহাসিক এ রায়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় আবেগের প্রতি লক্ষ রাখা হয়েছে। তাই দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহামান্য আদালতের এ রায়কে সশ্রদ্ধ স্বাগত জানিয়েছে। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার সিদ্ধান্ত দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চাহিদার ভিত্তিতেই নিতে হয়েছিল।

২০১৬ সালে সংবিধান সংশোধনে বিশেষ সংসদীয় কমিটির সঙ্গে এক বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সাংবাদিকদের জানিয়েছেলেন, তাঁর দল সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে বাদ দিতে চায় না। গণভবনে ওই সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে থাকবে, এবং তার দল আওয়ামী লীগ সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম বা বিসমিল্লাহির রহমানের রহিম বাদ দিতে চায় না। সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুসারে এখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম।

এছাড়াও সরকারিভাবে মসজিদের বিদ্যুতের বিল মওকুফ ও শুক্রবারকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণার কারণে মুসলিম ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে ক্রমেই প্রিয় ব্যক্তি হয়ে ওঠেন।

মৃত্যু
শারীরিক অসুস্থতার দরুন ২০১৯ সালের ২৭ জুন তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। তিনি ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই সকাল ৭ টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।তিনি রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতা, ফুসফুসে সংক্রমণ ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন।


1 টি মন্তব্য:

  1. Really Liked the information you have provided. I have an article relaed to it. I was searching about it on the internet and I found an amazing article on Quora Site. The provided Article was about a site that provides working modded android apps. The name of the site was “Fineapkapps”. The Article was very halpful, You should read that. Click Here to reach that amazing article: Quora Best Gaming Site.

    উত্তরমুছুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।