চশমা
পরলে যে কারোর মধ্যেই একটু ভারিক্কিভাব চলে আসে। চেহারায় একটু আভিজাত্য কিংবা ব্যক্তিত্ব আনার জন্য অনেকে চশমা ব্যবহার করেন—এমন উদাহরণ খুব বিরল নয়। যে ছাত্রের চোখে চশমা
থাকে, তাঁকে হুট করে খারাপ ছাত্র বা দুষ্টু
ভাবতে অনেক শিক্ষকেরই একটু যেন বাধে। সাদা কাচের চশমা থেকে কালো কাচের চশমায় দৃষ্টি ফেরান, ওটা তো মানুষের
চেহারায় যেন একইসঙ্গে আভিজাত্য আর ফ্যাশন-সচেতনতার
মিশেল তৈরি করে। চেহারায় জেল্লা বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। কিন্তু সব কথার শেষে চশমাকে মানুষের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার্য বস্তু ছাড়া আর কী হিসেবেই বা অভিহিত করা যায় !
চশমা ব্যবহারের সারকথা হলো, এর মাধ্যমে আসলে চোখের কোনো সমস্যাকে উতরে যাওয়ার চেষ্টা করা। ফ্যাশন-কেতার কালো চশমাও কাজ করে মানুষের চোখের রক্ষাকবচ হিসেবে। রোদে-ধুলোয় সেই কালো চশমা চোখের সংবেদনশীল অংশকে রক্ষা করে যেকোনো ধরনের অনিষ্ট থেকে। দূরের জিনিস দেখতে অসুবিধা হচ্ছে? কিংবা বইয়ের পাতার ছোট ছোট ছোট অক্ষর পড়তে গিয়ে মানুষ যদি গলদঘর্ম হয়, তাহলে চশমা হয়ে ওঠে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। দুটো সরু ডাঁট দিয়ে জোড়া দিয়ে নাকের ওপরে আটকে রাখা ওই কাঁচ দুটো আসলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে মানুষের দৃষ্টিকে করে তোলে স্বাভাবিক।
মানুষের নিত্য ব্যবহারের এই গুরুত্বপূর্ণ বস্তুটির উদ্ভাবন কিন্তু অনেক প্রাচীনকালে। সেই প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতার চিত্রিত প্রমাণ হায়ারোগ্লিফিকসে মানুষের চশমার ব্যবহার আবিষ্কার করেছেন ইতিহাসবিদেরা। সেই চশমা অবশ্য আজকের দিনের মতো ছিল না। সাধারণত কোনো জিনিসকে পরিষ্কার দেখার জন্য ওই সময় বিভিন্ন ধরনের কাচের প্রচলন ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য চোখে কাচের ব্যবহারের লিখিত প্রমাণ রয়েছে। রোমান সম্রাট নিরোর একজন শিক্ষক ওই সময়ের বিভিন্ন বিষয়ের বর্ণনার সঙ্গে দূরের জিনিস পরিষ্কারভাবে দেখার জন্য জলমিশ্রিত এক ধরনের কাচ চোখে লাগানোর কথা বলেছেন। রোমান গ্ল্যাডিয়েটরসদের লড়াই উপভোগ করতে গিয়ে নিজের আসনে বসে রোমান সম্রাট নিরো বিশেষ কাচ চোখে লাগাতেন—এমন নজিরও ইতিহাসে বিরল নয়। সত্যিকারের চশমা বলতে যা বোঝায়, তা প্রথম প্রচলিত হয় ইতালিতে দ্বাদশ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। ওই সময় চোখে আতশী কাচ লাগিয়ে ছোট জিনিসকে দৃষ্টিসীমায় নিয়ে আসার জন্য চোখে চশমা ব্যবহার করার নজির রয়েছে ইতিহাসে।
১২৮৬ সালের দিকে ইতালিতে প্রথম চশমা তৈরি হয়েছিল। জিওর্দানো দা পিসা নামের এক ব্যক্তি প্রথমবারের মতো চশমা তৈরি করেছিলেন। দা পিসার তৈরি চশমার উদ্দেশ্য ছিল দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার প্রতিকার। আধুনিক চশমার উদ্ভাবক হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে গিরোলামো সাভোনারোলা নামের এক ইতালীয়কে। তিনি ১৭২৭ সালে বর্তমান সময়ের চশমার প্রাথমিক নকশাটি তৈরি করেন। তার আগে দুই চোখের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা এড়াতে চোখের সামনে কাচ ধরা হতো। সাভেনারোলার নকশাটিকে স্থির রেখে এরপর চশমার নকশা নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়। ধীরে ধীরে এটি পায় আধুনিক চেহারা। চশমা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এগিয়ে চলে কেতাদুরস্ততার দিকে।
সূত্রঃ প্রথম আলো, ০৩-০৪- ২০১৩ ইং
সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে ফেসবুকে এ পাবেন।
উত্তরমুছুনএ কোড একটু মেইল করেন পিল্জ ভাই ।
হাবিব ভাই, আপনাকে মেইল পাঠিয়েছি। সমস্যা হলে জানাবেন।
মুছুন