গলে পাকিস্তানের বিপক্ষে
ওয়ানডেতে অভিষেক ২০০০ সালে। একই বছর একই মাঠে টেস্ট অভিষেক দক্ষিণ আফ্রিকার
বিপক্ষে। সেই যে শুরু হয়েছে আর থামেনি। রক্ত-মাংসের মানুষ হয়েও মেশিনের মতো রান
করে চলেছেন। আগুন নিভে যাওয়ার আগে যেমন দপ করে একবার জ্বলে ওঠে, ক্যারিয়ারের শেষ
ওয়ানডে টুর্নামেন্ট হিসেবে আগে ঘোষণা দিয়েছেন বলেই কিনা এবারের বিশ্বকাপে এভাবে
জ্বলে উঠলেন কুমার সাঙ্গাকারা। আসলে ৩৭ বছর বয়সী এই বাঁহাতির ব্যাটে কবে রান ছিল
না সেটা খুঁজতেই হিমশিম খাওয়ার মতো অবস্থা। ক্রিকেটের মনোযোগী ছাত্রদের তালিকা
করলে শুরুর দিকেই আসবে তাঁর নাম। আর ধারাবাহিকতা? সেখানেও সাঙ্গাকারা একটা
দৃষ্টান্ত। সেই ধারাবাহিকতারই চূড়ান্ত রূপটা কাল দেখালেন হোবার্টের বেলেরিভ ওভালে।
ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপ তো বটেই, ওয়ানডেতেই টানা চার ম্যাচে
সেঞ্চুরি! অবিশ্বাস্য, অসাধারণ কিংবা অতিমানবীয়- কোনো বিশেষণই আজ যথেষ্ট নয়
সাঙ্গার জন্য।
একদিনের ক্রিকেটের ৪৪
বছরের ইতিহাসে এমন কীর্তির হাতছানি এর আগে দেখেছেন আরো ছয়জন। কিন্তু তিন
সেঞ্চুরিতেই থামতে হয়েছে পাকিস্তানের জহির আব্বাস ও সাঈদ আনোয়ার, দক্ষিণ আফ্রিকার
হার্শেল গিবস, এবি ডি ভিলিয়ার্স ও কুইন্টন ডি কক এবং নিউজিল্যান্ডের রস টেলরকে।
সাঙ্গাকারা অন্য ধাতুতে গড়া, তাই বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার পর কাল
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেও চওড়া হয়ে উঠল তাঁর ব্যাট। ৯৫ বলে ১৩ চার ও ৪ ছক্কায় খেললেন
১২৪ রানের ইনিংস। এর আগেই ৮৬ বলে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ইতিহাসে ঢুকে পড়েন সাঙ্গাকারা। প্রথম
ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপের মতো ওয়ানডেতেও টানা চার সেঞ্চুরি। এর আগে
বিশ্বকাপের এক আসরে তিন সেঞ্চুরি করেন মার্ক ওয়াহ, ম্যাথু হেইডেন ও সৌরভ গাঙ্গুলী।
ক্যারিয়ারের গোধুলীবেলায়ও
ফর্মটা এমন তুঙ্গে যে ২০১৫ সালের আড়াই মাসেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব সংস্করণ মিলে
হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেছেন সাঙ্গাকারা (১০২৫)। ক্যারিয়ারের চতুর্থ ও শেষ
বিশ্বকাপটা তাঁর কাছে আলাদা হয়েই থাকবে। আগের তিন আসরে যেখানে এক সেঞ্চুরি সেখানে
এবার গ্রুপপর্বেই করে ফেললেন চারটি। সবমিলে বিশ্বকাপে পাঁচ সেঞ্চুরিতে সাঙ্গা কাল
স্পর্শ করেন অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিংকে। শচীন টেন্ডুলকারের সর্বোচ্চ ৬ সেঞ্চুরির
রেকর্ডটা এখন আর নিরাপদ নয়। গ্রুপের ৬ ম্যাচে ১২৪.০০ গড়ে করে ফেলেছেন ৪৯৬ রান।
বিশ্বকাপের এক আসরে টেন্ডুলকারের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটাও (২০০৩ বিশ্বকাপে ১১
ম্যাচে ৬৭৩ রান) নিশ্চয় সাঙ্গার দৃষ্টিতে রয়েছে।
এ তো গেল ব্যাটসম্যান
সাঙ্গাকারার কীর্তি, উইকেটরক্ষক সাঙ্গাকারাও কাল উঠে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র দু’টো ক্যাচ নিয়েছেন, আর তাতেই অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে (৫২)
টপকে বিশ্বকাপে সর্বাধিক ডিসমিসালের রেকর্ড এখন তাঁর দখলে। এই ম্যাচেই আবার
ওয়ানডেতে ৫০০ ডিসমিসালের মাইলফলকও ছুঁয়েছেন এই ৩৭ বছর বয়সী। এই বিশ্বকাপে
পেরিয়েছেন ওয়ানডেতে ১৪ হাজার রানের মাইলফলক, নিজেরই গড়া সর্বাধিক ডিসমিসালের
রেকর্ডটাকে নিয়ে গেছেন আরো উঁচুতে। কে বলবে, ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার সময় এসেছে
সাঙ্গাকারার? কালকের ম্যাচ শেষে তাই প্রিয় সতীর্থকে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আকুতি
জানালেন লঙ্কান অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, ‘আমি বিনীত হয়ে অনুরোধ
করছি কুমার (সাঙ্গাকারা) যেন অবসর না নেয়। তবে ওর ইচ্ছার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা
দেখাতে হবে। কারণ যতদিন ও দেশের হয়ে খেলেছে সবসময় আমরা ওর প্রতি কৃতজ্ঞ এবং ওকে
ধন্যবাদ জানাই’।
কাল বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার
তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৯৫ রানের জুটি গড়ে জয়ের ভিত্তিটা সাজিয়ে দেন তিলকারতে দিলশান ও
সাঙ্গাকারা। দুই ‘বুড়ো’কেই এগিয়ে রাখলেন ম্যাথুস, ‘ছেলেরা সত্যিই খুব ভালো
খেলছে। তবে কৃতিত্বটা দিলশান ও সাঙ্গাকারার পাওনা, বয়সের সাথে সাথে ওরা যেন আরো
ধারালো হচ্ছে। আমাদের এখন ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে হবে। বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে উন্নতি
করতে হবে। টানা তিন ম্যাচে স্কোরবোর্ডে ব্যাটসম্যানদের ৩০০ রান তুলতে দেখে দারুণ
লাগছে। এটা মোটেও সহজ কিছু নয়’। লঙ্কান অধিনায়কের আকুতি কানে গিয়েছে সাঙ্গাকারার। কিন্তু নিজের
সিদ্ধান্তে অটল ৪০৩ ওয়ানডেতে ২৫ সেঞ্চুরিসহ ১৪ হাজার ১৮৯ রানের মালিক, ‘অবসর
তো আর ফর্মের কারণে নিইনি। সময় আর পরিস্থিতি বিবেচনা করে এখনই উপযুক্ত সময় মনে
হয়েছে বলে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি। ভালো খেলতে পারছি কি পারছি না এই ভাবনা কখনোই মাথায়
আসেনি’।
সাঙ্গাকারার ইতিহাসের
ম্যাচেই বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়াকে টপকে এক লাফে পুল ‘এ’র
দুই নম্বরে উঠে এসেছে আগেই কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করা শ্রীলঙ্কা। শেষ আটে তাদের
সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। লঙ্কানদের কাছে হেরে বিশ্বকাপে ব্যর্থতার
পাল্লাটা কাল আরেকটু ভারি হয়েছে স্কটল্যান্ডের। কিন্তু ২২ গজে সাঙ্গাকারার এমন
কীর্তি দেখে সেই দুঃখটা বোধ হয় ভুলেই গিয়েছেন অধিনায়ক প্রেস্টন মমসেন, ‘আজ
(গতকাল) অনেককিছু শেখার অভিজ্ঞতা হল। বিশেষ করে বিশ্বের সেরা কিছু ব্যাটসম্যানের
খেলা দেখে। চাপের মধ্যেও ওরা কেমন মাথা ঠা-া রেখে খেলেছে, এ থেকে আমরা অনেককিছু
শিখতে পারি। আর আমরা যাদের বিপক্ষে খেলেছি সাঙ্গাকারা নিশ্চিতভাবেই তাদের মধ্যে এক
নম্বর ব্যাটসম্যান’।
ওয়ানডেতে টানা সেঞ্চুরি
ব্যাটসম্যান
|
সেঞ্চুরি
|
রান
|
প্রতিপক্ষ
|
ভেন্যু
|
সাল
|
কুমার সাঙ্গাকারা
|
৪
|
১০৫*
|
বাংলাদেশ
|
মেলবোর্ন
|
২০১৫
|
|
|
১১৭*
|
ইংল্যান্ড
|
ওয়েলিংটন
|
২০১৫
|
|
|
১০৪
|
অস্ট্রেলিয়া
|
সিডনি
|
২০১৫
|
|
|
১২৪
|
স্কটল্যান্ড
|
হোবার্ট
|
২০১৫
|
|
|
|
|
|
|
জহির আব্বাস
|
৩
|
১১৮
|
ভারত
|
মুলতান
|
১৯৮২
|
|
|
১০৫
|
ভারত
|
লাহোর
|
১৯৮২
|
|
|
১১৩
|
ভারত
|
করাচি
|
১৯৮৩
|
|
|
|
|
|
|
সাঈদ আনোয়ার
|
৩
|
১০৭
|
শ্রীলঙ্কা
|
শারজা
|
১৯৯৩
|
|
|
১৩১
|
ও.ইন্ডিজ
|
শারজা
|
১৯৯৩
|
|
|
১১১
|
শ্রীলঙ্কা
|
শারজা
|
১৯৯৩
|
|
|
|
|
|
|
হার্শেল গিবস
|
৩
|
১১৬
|
কেনিয়া
|
কলম্বো
|
২০০২
|
|
|
১১৬*
|
ভারত
|
কলম্বো
|
২০০২
|
|
|
১৫৩
|
বাংলাদেশ
|
পচেফস্ট্রুম
|
২০০২
|
|
|
|
|
|
|
এবি ডি ভিলিয়ার্স
|
|
১১৪*
|
ভারত
|
গোয়ালিয়র
|
২০১০
|
|
|
১০২*
|
ভারত
|
আহমেদাবাদ
|
২০১০
|
|
|
১০২
|
ও.ইন্ডিজ
|
নর্থ সাউন্ড
|
২০১০
|
|
|
|
|
|
|
কুইন্টন ডি কক
|
৩
|
১৩৫
|
ভারত
|
জোহানেসবার্গ
|
২০১৩
|
|
|
১০৬
|
ভারত
|
ডারবান
|
২০১৩
|
|
|
১০১
|
ভারত
|
সেঞ্চুরিয়ন
|
২০১৩
|
|
|
|
|
|
|
রস টেলর
|
৩
|
১১২*
|
ভারত
|
হ্যামিল্টন
|
২০১৪
|
|
|
১০২
|
ভারত
|
ওয়েলিংটন
|
২০১৪
|
|
|
১০৫*
|
পাকিস্তান
|
দুবাই
|
২০১৪
|
বিশ্বকাপে সর্বাধিক ডিসমিসাল
উইকেটরক্ষক
|
ম্যাচ
|
ডিসমিসাল
|
ক্যাচ/স্ট্যা.
|
কুমার সাঙ্গাকারা
|
৩৬
|
৫৪
|
৪১/১৩
|
অ্যাডাম গিলক্রিস্ট
|
৩১
|
৫২
|
৪৫/৭
|
ব্রেন্ডন ম্যাককালাম
|
৩০
|
৩২
|
৩০/২
|
মার্ক বাউচার
|
২৫
|
৩১
|
৩১/০
|
মঈন খান
|
২০
|
৩০
|
২৩/৭
|
সূত্রঃ ইনকিলাব
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।