সম্মানিত দর্শক আপনাকে স্বাগতম। আমাকে Facebook instagram Telegram এ পাবেন। কামরুলকক্স: এক স্ত্রীর স্বামী কত?

এক স্ত্রীর স্বামী কত?


হিন্দু ধর্মের পঞ্চপাণ্ডব আর দ্রৌপদীর কথা অনেকেরই জানা। পাঁচ ভাইয়ের একজন মাত্র স্ত্রী। বাস্তবে এমন ঘটনা বা উদাহরণ খুব বেশি দেখা যায় না। বাস্তবে একজন পুরুষের একাধিক বিয়ে করার ব্যাপারটা হরহামেশাই দেখা যায়। কিন্তু একজন মেয়ের একাধিক বিয়ে করে একই সঙ্গে সংসার করার ব্যাপারটি একদমই খাপছাড়া। আর এই খাপছাড়া ব্যাপারটিই নিয়মে পরিণত হয়েছে পশ্চিম ভারতের এক বিশেষ জনগোষ্ঠীর কাছে। 'টোডা' নামের এই জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ নারীই একাধিক স্বামী নিয়ে সংসার করে থাকেন।

এর পেছনে তাদের গোত্রগত ঐতিহ্য যেমন দায়ী তেমনি জনসংখ্যার অসমতারও একটা ব্যাপার রয়েছে।
'টোডা' শীর্ষক এই জনগোষ্ঠীর বসবাস দক্ষিণ ভারতের নীলগিরি পর্বতে। এরা স্বনির্ভর আর স্বয়ংসম্পূর্ণ এক ক্ষুদ্র জনজাতি। তবে এদের উৎপত্তি বা বিকাশ সম্বন্ধে সঠিক কোনো ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়নি। টোডাদের একমাত্র পেশা পশুপালন এবং দুধ উৎপাদন। ১৯০১ সালে এদের মোট জনসংখ্যা ছিল ৮০৭। আর গত ১০০ বছরে এদের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৭০০। এর মধ্যে ৬০ ভাগেরও বেশি পুরুষ আর ৪০ ভাগের কম নারী। আর এ কারণেই টোডা সমাজের মেয়েরা বহুবিবাহে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। তাদের বহু বিবাহ প্রথা অনুসারে মেয়েরা যে কোনো পরিবারের একাধিক ছেলেকে বিয়ে করতে পারে অর্থাৎ কোনো পরিবারে যদি পাঁচ ভাই থাকে তাহলে ওই পাঁচ ভাইকে যে কোনো একটি মেয়ে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। এ বিয়েকে বলে ফ্রাটারনাল পলিঅ্যানড্রি (Faternal polyandry). পঞ্চপাণ্ডব আর দ্রৌপদীর কাহিনীর সঙ্গে মিল থাকলেও টোডারা হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করে না। এ জনগোষ্ঠীর উৎপত্তি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও এরা দীর্ঘ অতীত থেকে নীলগিরি পর্বতে বসবাস করে এসেছে। এরা কথা বলে দ্রাবিড়িয়ান টোডা ভাষায়, যা একান্তই ওদের নিজস্ব এবং এর কোনো লিখিত রূপ নেই। টোডা উপজাতির ধর্ম বিশ্বাস অনুসারে এরা গৃহপালিত মহিষের পূজা করে। এছাড়া এদের দেবদেবীর জন্য আছে সর্বদেবতা মন্দিরও। টোডারা মনে করে, তাদের সৃষ্টিকর্তা প্রথমেই সৃষ্টি করেছেন পবিত্র মহিষ এবং তারপরই সৃষ্টি করেছেন তাদের প্রথম পুরুষকে। আর প্রথম নারী সৃষ্টি হয়েছে প্রথম পুরুষের ডান পাঁজরের হাড় থেকে। এদের ধর্মে নদীর পুল বা সাঁকো কিংবা ব্রিজ পার হওয়া নিষিদ্ধ। নদী পার হতে হলে সাঁতার দিয়েই পার হতে হবে।

এদের একজন প্রধান ধর্মীয় দুক্সমানব থাকেন। যিনি সার্বক্ষণিক ধর্মীয় দুগ্ধশালায় অবস্থান করেন। তাকে সবাই খুব উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন মনে করে। তবে দুক্সমানবের জন্য আছে কঠোর ধর্মীয় অনুশাসন। তিনি বিয়ে করতে পারবেন না, কারও বাড়িতে বা কোনো গ্রামে যেতে পারবেন না, কেউ তাকে কিংবা তিনিও কাউকে স্পর্শ করতে পারবেন না, এমনকি তার আত্মীয়-স্বজন মারা গেলে শেষকৃত্যেও তিনি যোগ দিতে পারবেন না। তার হাত-পায়ের নখ এবং চুল কাটাও নিষেধ। এ দুক্সমানবকে অপবিত্র করার লক্ষ্যে কেউ স্পর্শ করলে ধর্মীয় রীতিতে তাকে শাস্তি পেতে হয়। টোডা লোকজন জোটবদ্ধভাবে ছোট ছোট গ্রামে বাস করে। এদের গ্রামকে এরা বলে 'মান্ড'। গ্রামের লোকদের মধ্যে হৃদ্যতার কোনো অভাব নেই। তারা সবাই সবাইকে একই পরিবারের লোক মনে করে। প্রত্যেক পরিবারে সাধারণত ঘর থাকে পাঁচটি। তিনটিকে তারা

ব্যবহার করে বসবাসের জন্য, একটি ব্যবহার হয় পশুপালন আর অন্যটি রাতের বেলা পশুদের বাচ্চাকাচ্চা রাখার কাজে। তবে এদের ঘরের দরজাগুলো খুবই ছোট। ঘরে ঢুকতে এবং বের হতে অনেকটা হামাগুড়ি দিতে হয়। বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই এ ব্যবস্থা। টোডারা এক পৃথক জনগোষ্ঠী হলেও বর্তমানে ওদের গায়েও লেগেছে আধুনিকতার হাওয়া। এদের কেউ কেউ চলে এসেছে শহরে। গ্রামেও কেউ কেউ গড়ে তুলেছে ইটের বাড়ি। মেয়েদের বহুবিবাহ প্রথাও কমতে শুরু করেছে একটু একটু করে। সার্বিকভাবে তারা নিরামিষভোজী হলেও অনেকেই হয়ে পড়ছে আমিষভোজী। পর্যাপ্ত সুযোগ ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় হয়তো এদের জীবনেও পরিবর্তন আসবে। আর সেদিকে মনোযোগী না হলে হয়তো ইতিহাসের পাতা থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে এদের যত স্মৃতি।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comments করার জন্য Gmail এ Sign in করতে হবে।